বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সেন্টমার্টিনে নৌযান চলাচলে সংকটের নেপথ্যে দুটি ডুবোচর

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ১৫ জুন, ২০২৪ ১৯:৩৯

সেন্টমার্টিন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে দুটি স্থানে দুটি বালুচর সৃষ্টি হয়েছে। ভাটার সময় চর দুটি জেগে ওঠায় নৌ চলাচলে সাগরের ভেতরে মিয়ানমারের একটি অংশ বাংলাদেশ ব্যবহার করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। সম্প্রতি আরাকার আর্মি মিয়ানমারের ওই অঞ্চল দখলে নেয়ায় বাংলাদেশের নৌযান সাগরের ওই অংশ অতিক্রমের সময় তারা গুলি ছুড়ছে।

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে দুটি স্থানে প্রায় এক দশক আগে দুটি বালুচার জেগে ওঠে। এই দুটি বালুচরের কারণে ভাটার সময়ে সেন্টমার্টিনে চলাচল করা যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌযানগুলো সাগরের ভেতরে মিয়ানমারের একটি অংশ ব্যবহার করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।

মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সঙ্গে বাংলাদেশের বিজিবির সমন্বয়ের সুবাদে এই নৌযান চলাচলে ইতোপূর্বে কখনোই কোনো বাধার সৃষ্টি হয়নি। তবে সাম্প্রতিক অতীতে আরাকান আর্মি মিয়ানমারের এই অঞ্চল দখল করে নেয়ার পর এই নৌপথে চলাচলে ঝামেলা তৈরি হচ্ছে। সমন্বয়হীনতার সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের সেন্টমার্টিনগামী ট্রলার ও নৌযানগুলোকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছে আরাকান আর্মি।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ বাণিজ্যিক ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচল সাময়িক স্থগিত করার কারণে সেন্টমার্টিনে বসবাসকারীদের মধ্যে খাদ্য সংকট তৈরি হয়েছে এবং বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

জানা যায়, কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ এলাকায় নাফ নদ এবং বঙ্গোপসাগরের মোহনায় গোলারচর নামক এলাকায় আনুমানিক দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বড় একটি বালুর চর এবং গোলারচর থেকে আনুমানিক ৫-৭ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের মধ্যবর্তী স্থানে নাইক্ষ্যংদিয়া নামক স্থানে এক কিলোমিটারের মধ্যে আরও একটি বালুচর জেগে উঠছে। ভাটার সময় চর দুটি জেগে ওঠে।

ফলে টেকনাফের দমদমিয়া কেয়ারী জেটিঘাট থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে যাত্রা করা যাত্রী ও পণ্যবাহী জাহাজ, মাছ ধরার ট্রলার, সার্ভিস বোট এবং স্পিডবোটসহ সব ধরনের নৌযানগুলোকে গমনাগমনের সময় জেগে ওঠা বালুচরের কারণে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম বাউন্ডারি লাইনের (আইএমবিএল) মিয়ানমার অংশের নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা ব্যবহার করতে হয়। বর্ণিত চর দুটি ড্রেজিং করা হলে মিয়ানমারের জলসীমা আর ব্যবহারের প্রয়োজন হবে না।

সেন্টমার্টিনে নৌযান চলাচল নিয়ে সাম্প্রতিক অতীতে বেশ কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।

ঘটনা-১

টেকনাফ পৌরসভার নৌকা ঘাট থেকে ১ জুন বিকেল সাড়ে ৩টায় একটি ট্রলার সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে মুদি মালামাল ও ১০ জন যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যায়। আনুমানিক বিকেল সাড়ে ৪টার সময় নাইক্ষ্যদিয়া খাল এলাকা অতিক্রমের সময় আরাকান আর্মি ট্রলারটিকে লক্ষ্য করে ৬-৭ রাউন্ড অস্ত থেকে গুলি ছোড়ে। অবশ্য এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি এবং ট্রলারটি বিকেল ৫টা ৫৫ মিনিটে সেন্টমার্টিন দ্বীপে নিরাপদে পৌঁছে।

ঘটনা-২

সেন্টমার্টিনের জিনজিরায় স্থগিতকৃত একটি কেন্দ্রে টেকনাফ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদের ফলাফল নির্ধারণের জন্য ভোট গ্রহণ করা হয় ৫ জুন। ভোটগ্রহণ শেষে বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটের দিকে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট শাফকাত আলীর নেতৃত্বে নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মোট ২৭ জন সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফের উদ্দেশে মেটাল শার্ক ও কাঠের বোটযোগে টেকনাফে ফিরছিলেন। পথে নাফ নদ ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় নাইক্ষ্যংদিয়া চর এলাকা অতিক্রম করার সময় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের মেগিচং এলাকা থেকে মেটাল শার্ক ও কাঠের বোটকে লক্ষ্য করে আরাকান আর্মি গুলিবর্ষণ করলে। এ সময় মেটাল শার্কে ২ রাউন্ড এবং কাঠের বোটে ৪ রাউন্ড গুলি লাগে। পরবর্তীতে ওই বোট এবং মেটাল শার্ক দুটি নিরাপদে টেকনাফ কোস্টগার্ডের বোটপুলে ফিরে আসে।

ঘটনা-৩

নাইক্ষ্যংদিয়া খাল সীমান্তে নাফ নদীর মোহনায় ৮ জুন আনুমানিক দুপুর ১২টার দিকে দুটি কাঠের ট্রলার টেকনাফ পৌরসভাস্থ কাউকখালী ঘাট থেকে সিমেন্ট, রড ও ৬ জন যাত্রী নিয়ে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে যাওয়ার পথে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের মেগিচং ক্যাম্পের ওয়াচ টাওয়ার থেকে আরাকান আর্মি আনুমানিক ১৫-২০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। পরে ট্রলার দুটি ১২টা ২৫ মিনিটের দিকে শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে ফিরে আসে। এতে একটি ট্রলারে ৭ রাউন্ড গুলি আঘাত হানে। এ ঘটনায়ও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

ঘটনা-৪

১১ জুন সকাল ১০টা ৩০ মিনিটের দিকে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের গোলারচরের বিপরীতে মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়া খাল সীমান্তে নাফ নদের মোহনা হয়ে একটি স্পিডবোটযোগে সেন্টমার্টিনের ৫ জন স্থানীয় বাঙালি শাহপরীর দ্বীপ জেটি থেকে সেন্টমার্টিনে ফিরছিলেন। পথে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের মেগিচং বিজিপি ক্যাম্পের ওয়াচ টাওয়ার এলাকা থেকে আরাকান আর্মি ওই স্পিডবোটকে লক্ষ্য করে আনুমানিক ৪-৫ রাউন্ড গুলি করে। এতে স্পিডবোটে অবস্থানরত বাঙালিরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। যদিও কেউ হতাহত হননি। পরবর্তীতে ১১টার দিকে স্পিডবোটটি সেন্টমার্টিনে পৌঁছায়।

গুলিবর্ষণের এসব ঘটনার কারণে বিগত কয়েকদিন ধরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় দ্বীপে খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, সেন্টমার্টিন দ্বীপে আট হাজার ৪৯২ জন মানুষ বসবাস করে। জেলা ও উপজেলা পর্যায় থেকে খাদ্য/পণ্য সরবরাহ করা না গেলে এই দ্বীপের বাসিন্দারা খাদ্য সংকটে পড়তে পারে। কারণ, সেন্টমার্টিনের সাধারণ জনগণ মূলত টেকনাফ থেকে খাদ্যপণ্য নিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপে জীবন-যাপন করে। বিরাজমান পরিস্থিতিতে ১৩ জুন থেকে কক্সবাজার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে বঙ্গোপসাগর হয়ে বড় বড় ট্রলারে সেন্টমার্টিনে পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।

জানা যায় যে, নৌযান চলাচল স্থগিত এবং খাদ্য সংকটের পাশাপাশি মিয়ানমার নৌবাহিনীর টহল বৃদ্ধি পাওয়ায় দ্বীপটির স্থানীয়দের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। এ অবস্থায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্বীপের স্থানীয়দের আতংকিত না হওয়ার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ দরকার।

এর পাশাপাশি বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত গুলিবর্ষণের ঘটনা রোধকল্পে আরাকান আর্মির সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধন করা যেতে পারে।

এছাড়াও সমস্যাটির স্থায়ী সমাধানের জন্য টেকনাফের সাবরাং টুরিজ্যম ইকো পার্ক সংলগ্ন সাগর উপকূলে একটি জেটি ঘাট নির্মাণ করা যেতে পারে।

টেকনাফের সাবরাং ইকো পার্ক বিচ থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের দূরত্ব আনুমানিক ২৪ কিলোমিটার। অপরদিকে বর্তমান জেটিঘাট (দমদমিয়া কেয়ারী জেটিঘাট) থেকে সেন্টমার্টিনের দূরত্ব আনুমানিক ৩৪ কিলোমিটার। টেকনাফের সাবরাং টুরিজ্যম ইকো পার্ক সংলগ্ন সাগর উপকূলে জেটি ঘাট নির্মাণ করা হলে সেন্টমার্টিনের সঙ্গে টেকনাফের যোগাযোগ সহজ ও কম সময়ে সম্পন্ন হবে এবং স্থানীয় জেলে, পর্যটক ও সেন্টমার্টিনের স্থানীয় বাসিন্দাদের টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে গমনাগমন কম সময়সাপেক্ষ, সহজ ও নিরাপদ হবে।

এ বিভাগের আরো খবর