ঈদে পঞ্চগড়ের বিনোদনের স্থান থেকে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিয়ে পর্যটকদের ভ্রমণ স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলতে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে সমাজের সচেতন মহল।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষজন ছুটে এসেছে বাড়িতে। উৎসবের এ আয়োজনকে ঘিরে ছুটির সময় পরিবার পরিজন নিয়ে জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণ করেন অনেকেই, কিন্তু একটি সুবিধাভোগী মহল জেলার এসব দর্শনীয় স্থানে বাণিজ্যিক প্রসার ঘটিয়ে পর্যটকদের জিম্মি করে প্রতারণাসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় ফেলে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
তারা জানান, এলোমেলো পার্কিং, রাস্তা দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, স্থানীয় ক্লাব সংগঠন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, পরিবহন স্ট্যান্ডসহ মনগড়া অজুহাতে সাধারণ মানুষকে করা হয় হয়রানি। যা প্রতি বছরেই হয়ে আসছে। বিশেষ করে সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের মহারাজার দিঘি, চাওয়াই অববাহিকা, তেতুলিয়া ডাক বাংলো শহরের তুলারডাঙ্গা হিমালয় পার্ক, বোদার টাঙ্গন ব্যারেজ এলাকায় ঘটে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা।
জেলা নাগরিক কিমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এরশাদ হোসেন সরকার বলেন, ‘ঈদে ঘরমুখী মানুষের সংখ্যা বেড়ে যায়, এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা আসে পঞ্চগড়ে নানা রকমের ঝামেলায় পড়ে, প্রশাসন একটু সজাগ হলেই এসব বন্ধ করা সম্ভব। দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। প্রকৃতির অপরূপ সাজে সজ্জিত এই সীমান্ত নগরী।
‘জেলা সদর থেকে সোজা উত্তরে ১৫ কিলোমিটার দূরে পঞ্চগড় বাংলাবান্ধা জাতীয় মহাসড়কের ওপর অবস্থান চাওয়াই নদীর পাড়ে চাওয়াই অববাহিকা। যা ৭১-এর মুক্তাঞ্চল নামে পরিচিত।’
তিনি জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদাররা যুদ্ধের ভারি অস্ত্র এ সেতু দিয়ে বহন করতে পারেনি। মুক্তি বাহিনী মাইন্ড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এটি ধ্বংস করে দেয়ায় পুরো যুদ্ধের সময়ে এই অঞ্চল সহ তেঁতুলিয়া উপজেলা ছিল মুক্তাঞ্চল।
উপজেলা প্রশাসন সরকারি ব্যবস্থাপনায় এখানে গড়ে তুলেছে শিশুদের জন্যে পার্ক, ভ্রমণকারীদের জন্যে নদীর তীর ঘেঁষে বসার ব্যবস্থা, সীমান্ত জেলার নামকরণ ফলক। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত পর্যটকদের পদচারণায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠে এলাকা। সীমান্ত রেখায় নৈসর্গিক এ দৃশ্যপট উপভোগ করতে আসেন তেঁতুলিয়ায় পরিভ্রমণকারী পর্যটকরাও। হাতের নাগালেই ভারতীয় ভূখণ্ডে সমতলের চা বাগান, ভারত থেকে ছুটে আসা চাওয়াই, ডাহুক নদীর প্রবাহ, বিভিন্ন প্রজাতির পাখিসহ সবুজ প্রাণ প্রকৃতি।
এই অববাহিকায় সড়ক বিভাগের পরিত্যক্ত সড়কের বিশাল অংশে পর্যটকদের জন্যে খোলা স্থানে পার্কিংসহ শিশুদের জন্যে খাবার দোকান, খেলনার দোকানসহ নানা স্থাপনা গড়ে উঠেছে। পর্যটকরা স্বচ্ছন্দেই সেই জায়গাটি ব্যবহার করে আসছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, হঠাৎ করেই কিছু ব্যবসায়ী সেটি দখল করে পুরো জায়গাটিতে স্তূপ করে রেখেছে বালু পাথর দিয়ে। ফলে বিড়ম্বনায় পড়েছে সাধারণ পর্যটকরা।
জেলা সদর থেকে বেড়াতে আসা পুলিশ কর্মকর্তা কাইয়ুম আলী বলেন, ‘শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে মানুষ অবসরে পরিবার পরিজন নিয়ে চাওয়াই নদীর মুক্ত বাতাসে ছুটে আসে। সড়ক বিভাগের পরিত্যক্ত সড়কের ওপর পার্কিং করে এলাকা ভ্রমণ করে। হঠাৎ করেই কিছু ব্যবসায়ী জায়গাটি দখলে নিয়ে বালু পাথরের স্তূপ করেছে। এতে সমস্যায় পড়েছে সকলে।’
জেলা শহরের ব্যবসায়ী হাজী আকতারুল ইসলাম বলেন, ‘শহরে শিশুদের বিনোদনের কোনো জায়গা নেই, চাওয়াই অববাহিকায় মানুষজন পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটে আসে। সুন্দর নান্দনিক এ পরিবেশটি এখন অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের দখলে। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।’
স্থানীয় অমরখানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নুরুজ্জামান বলেন ‘পরিষদের পক্ষ থেকে এলাকাটি দখলমুক্ত করতে শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’