বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হাটে বেপারিদের আনাগোনায় লাভ চাষির, কোণঠাসা সাধারণ ক্রেতা

  •    
  • ১৫ জুন, ২০২৪ ১০:৩৯

স্কুলশিক্ষক লাল্টু মিয়া বলেন, ‘আমাদের এলাকায় কোরবানির আজ (শুক্রবার) শেষ হাট। কোরবানির জন‍্য একটি ছাগল নিতে এসেছি। এসে দেখি গত হাটের থেকে আজ দাম অনেক বেশি। এর একটাই কারণ। আজ বাহির থেকে অনেক গরুর বেপারিরা এসেছে, যার কারণে যে ছাগল গত হাটে ২৫ হাজার টাকা দাম ছিল, আজ তার দাম ২৮ হাজার টাকা। এতে চাষিদের বাম্পার। আর আমরা হয়ে গেছি কোণঠাসা।’

ঈদুল আজহা কড়া নাড়ছে দুয়ারে। এ ঈদকে সামনে রেখে জমে ওঠে খুলনা বিভাগের ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী মেহেরপুরের বামন্দী পশু হাট। এ হাটটিকে বলা হয় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ গরু-ছাগলের হাট।

কোরবানির ঈদের আগ মুহূর্তে হাটটিতে পা ফেলানোর জায়গা পাওয়াটাই কঠিন হয়ে যায় পশু পালনকারী চাষি, খামারি, সাধারণ ক্রেতা ও বেপারিদের আনাগোনায়। অথচ কয়েক দিন আগেও ক্রেতা ও ব‍্যবসায়ী সংকটে ভুগছিলেন প্রান্তিক চাষি ও খামারিরা।

শেষ সময় এসে বাজারটির চিত্র পাল্টে যায়, তবে এলাকার বাইরে থেকে অনেক বেশি বেপারির (ব‍্যবসায়ী) উপস্থিতিতে কোণঠাসা হয়ে বিপাকে পড়েন ক্রেতারা।

সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগ, এলাকার বাইরে থেকে অনেক গরুর ব‍্যবসায়ী এসে সাধারণ বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে গরু-ছাগল কেনেন। এর ফলে বাড়তি দামেও কাঙ্ক্ষিত পশুটি পাননি তারা।

সাধারণ ক্রেতা, বেপারি ও পশুর হাট মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সপ্তাহে সোম ও শুক্রবার বসে বামন্দীর পশু হাট। কোরবানি ঈদের আগে সর্বশেষ শুক্রবার বসে ঐতিহ্যবাহী এ হাট।

কিছুদিন আগেও এই পশুর হাটে বেপারি ও সাধারণ ক্রেতাদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম ছিল, তবে শুক্রবার হঠাৎ করে এ হাটে ঢাকাসহ দেশের অন‍্যান‍্য এলাকা থেকে ট্রাক নিয়ে অনেক গরু ব‍্যবসায়ী আসেন। এতে করে গরু-ছাগলের চাহিদার পাশাপাশি দামও বেড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ ক্রেতাদের বাজেটের চেয়ে বেশি দামে পশু কিনতে হয়।

যা বললেন ক্রেতারা

বামন্দী হাটে গতকাল কথা হয় কোরবানির পশু কিনতে আসা কয়েকজনের সঙ্গে। তাদের একজন আবদুস সালাম বলেন, ‘আজ (শুক্রবার) বামন্দী পশু হাটে পশুর দামে আগুন লেগে গেছে। গত সোমবার হাটে যে গরুর দাম চাইছিল ১ লক্ষ ৪০ হাজার, আজ তার দাম চাইছে ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। তারপরও পাওয়া কঠিন।

‘গরুর চাষির গরুর দড়ি ধরে একাধিক বেপারি দাঁড়িয়ে থাকছে। আমাদের সুযোগ পাওয়াটাই কঠিন।’

আরেক ক্রেতা রতন বলেন, ‘আমরা গত সোমবার কোরবানির জন‍্য ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনেছিলাম। বাড়িতে নিয়ে এসে দেখি গরুটির দাঁত ওঠেনি। তাই আজ হাটে সেই গরুটি বিক্রি করে আরেকটি গরু কিনব বলে এসেছি।

‘সেই গরুটি আজ বিক্রি করলাম ১ লক্ষ ৪৫ হাজারে। আরেকটি কিনলাম ১ লক্ষ ৬৫ হাজারে। আজ হাটে অনেক গরুর বেপারি এসেছে, যার ফলে গরুর চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি দামও বেড়ে গেছে। আর আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতারা কোণঠাসা হয়ে গেছি।’

স্কুলশিক্ষক লাল্টু মিয়া বলেন, ‘আমাদের এলাকায় কোরবানির আজ (শুক্রবার) শেষ হাট। কোরবানির জন‍্য একটি ছাগল নিতে এসেছি। এসে দেখি গত হাটের থেকে আজ দাম অনেক বেশি। এর একটাই কারণ।

‘আজ বাহির থেকে অনেক গরুর বেপারিরা এসেছে, যার কারণে যে ছাগল গত হাটে ২৫ হাজার টাকা দাম ছিল, আজ তার দাম ২৮ হাজার টাকা। এতে চাষিদের বাম্পার। আর আমরা হয়ে গেছি কোণঠাসা।’

গরু পালনকারী জহুরুল জানান, তার পোষা গরুটি বিক্রির জন‍্য গত দুই হাটে বামন্দী ঘুরেছেন, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় গরুটি বিক্রি করতে পারেননি। শুক্রবার ঈদের আগে শেষ হাট। যে গরুটি তিনি গত দুই হাটে দেড় লাখে বিক্রি করতে চেয়েও ক্রেতা পাননি, সেই গরুই বিক্রি করেছেন এক লাখ ৭৫ হাজার টাকায়।

আরেক গরু পালনকারী আনোয়ার বলেন, ‘আমি বছরে দুটি করে গরু পালন করি। আর কোরবানির ঈদে বিক্রি করি, তবে গত কয়েক হাটেই আমার পোষা গরু দুটির ভালো দাম পাইনি। আজ বাইরের বেপারি ভালো দামেই গরু দুটি কিনে নিল।’

বেপারিদের ভাষ্য

ঢাকা থেকে আসা গরুর বেপারি মহাসিন আলী বলেন, ‘আমি আজ এই পশু হাট থেকে তিন ট্রাক গরু কিনে ঢাকায় পাঠাব। সেই লক্ষ্যে সকাল থেকেই পশু পছন্দ করে বেড়াচ্ছি, তবে আজ এই হাটে অনেক বেপারির সমাগম ঘটেছে, যার ফলে পশুর চাহিদা বেড়েছে। বেড়েছে দামও।’

ঢাকা থেকে পশুর হাটে আসা আরেক বেপারি তৈয়ব আলী বলেন, ‘আমরা কয়েকজন পার্টনার মিলে প্রায় ২০ বছর ধরে বামন্দীর এই হাট থেকে পশু কিনে ঢাকার বাজারে বিক্রি করি। মেহেরপুরের গরু ঢাকার বাজারে চাহিদা থাকায় এখানকার গরু-ছাগল কিনে বেশ পড়তা হয়।

‘কেননা এখানকার অধিকাংশই পশু আসে প্রান্তিক চাষিদের কাছ থেকে। তা ছাড়া চাষিদের কাছ থেকে পশু কিনে মজা বেশি। আমাদের ঈদের আগে আজকেই শেষ হাট।’

জেলার ঐতিহ্যবাহী বামন্দী পশু হাট ইজারাদার মামুন বলেন, ‘কোরবানির ঈদ সামনে রেখে মূলত আমাদের হাট ইজারার টাকা ওঠে। এই পশুর হাটটি গত বছর সাড়ে চার কোটি টাকায় ডাক হয়েছে।

‘গত সোমবার বামন্দী পশু হাটে গরু আমদানি হয়েছিল তিন হাজার ৯৭৫টি। আর বিক্রি হয়েছিল তিন হাজার ৮৪৯টি, তবে আজ সোমবার হয়তো গরুর আমদানি সাত হাজার ছাড়িয়ে যাবে।’

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারিচুল আবিদ জানান, এ বছর কোরবানির ঈদ উপলক্ষে মেহেরপুরে ৪৫ হাজার গরু ও এক লাখ ২৮ হাজার ৮০টি ছাগল প্রস্তুত করেছেন ৩০ হাজার খামারি। এগুলোর আনুমানিক দাম ধরা হয় প্রায় এক হাজার ১০০ কোটি টাকা।

জেলায় পশুর চাহিদা ৯০ হাজার ১৯৩টি। বাকি পশু চলে যাবে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায়।

এ বিভাগের আরো খবর