গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে কোরবানির পশুর হাট বসানোকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও জনতার মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন পুলিশসহ অন্তত ১২ জন। এসময় পরিস্থিতি মোকাবেলায় তিন রাউন্ড গুলি ছোড়ে পুলিশ। সংঘর্ষ চলাকালে নগদ টাকাসহ অন্তত ১৫-২০টি গরু-ছাগল লুট হয়েছে বলে দাবি হাট ইজারাদার কর্তৃপক্ষের।
বুধবার বিকেলে উপজেলার শান্তিরাম ইউনিয়নের মজুমদার বাজার-সংলগ্ন স্থানে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ-সার্কেল) ধ্রুব জ্যোতির্ময়, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলাম এবং সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি মাহবুব আলম।
এ ঘটনায় একে অপরকে দোষারোপ করে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতা, ইজারাদার ও পুলিশ।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিনের হাট-বাজারের মতোই কোরবানি উপলক্ষে বুধবারও সেখানে পশুর হাট বাসানো হয়। হাট চলাকালে হঠাৎ পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। পশুর হাট অবৈধভাবে বসানো হয়েছে জানিয়ে, বিভিন্ন মহলের অভিযোগের কথা তুলে হাট পণ্ড করে দেয়ার চেষ্টা করেন পুলিশ সদস্যরা। পুলিশের এমন কাণ্ডে হাটে থাকা উপস্থিত জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এর একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে উপস্থিত জনতার সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পরে পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণে নিতে ৩ রাউন্ড শটগানের গুলি ছোড়ে পুলিশ।
সংঘর্ষে আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় অনেকে নগদ টাকা এবং অন্তত ১৫ থেকে ২০ গরু হারিয়ে গেছে জানিয়ে অনেকেই খোঁজাখুঁজিও করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও গরুক্রেতা সুজন মিয়া বলেন, ‘হাট চলাকালে বিকেলের দিকে হঠাৎ পুলিশ অন্যায়ভাবে হাটে প্রবেশ করে এই পশুরহাট পণ্ড করে দেওয়ার চেষ্টা করলে ইজারাদারের লোকজন, হাটের ক্রেতা-বিক্রেতা ও দালালের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। এসময় বিক্রেতাদের বেশ কয়েকটি গরু হারিয়ে গিয়েছে এবং অনেকের টাকা পয়সা খোয়া গেছে। সুযোগ বুঝে কেউ কেউ লুটও করেছেন।’
জানতে চাইলে হাট ইাজারাদার ওবাইদুল্লাহ বলেন, “কোরবানি উপলক্ষে এখানে পশুহাট বসানোর বিষয়ে কোনো বাঁধা-নিষেধ নেই। সে কারণে হাট বসানো হয়েছে। এর আগে ‘এখানে কেন পশুর হাট বসানো যাবে না’ মর্মে হাইকোর্টের একটি লিগ্যাল নোটিশ ইউএনওকে দেয়া হয়েছে। এরপরও পুলিশ বেআইনিভাবে এসে হাট পণ্ড করে দিয়েছে।”
সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি মো. মাহবুব আলম বলেন, ‘জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ বিভিন্ন মহলের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ সেখানে কোরবানির পশুরহাট না বসানোর জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে, কিন্তু এ সময় উপস্থিত জনতা পুলিশের সরকারি কাজে বাধা দেয়। তাদের আক্রমণে আমাদের এসআই আবুল কালাম আজাদ, এএসআই মাসুদ রানা, কনস্টেবল মনির হোসেন ও সোলায়মান হোসেন আহত হয়েছেন।’
এসময় গুলি ছোড়ার বিষয়টি স্বীকার করেন ওসি।
এ ব্যাপারে সুন্দরগঞ্জ ইউএনও তরিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, “ওবাইদুল্লাহ নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বিধি মোতাবেক মজুমদার হাটটি ইজারা নেন, কিন্তু সেটি গরুর হাট নয়, সাধারণ হাট। তিনি সেখানে গরুর হাট বসাতে চেয়ে আমার কাছে মৌখিক অনুমতি নিতে আসেন। হাটের পরিধি ছোট এবং সামগ্রিক বিষয় বিবেচনা করে তাকে হাট বসাতে বারণ করা হয়।
“পরে তিনি ‘কেন মজুমদার হাটে কোরবানির পশুর হাট বসাতে পারবেন না’ মর্মে হাইকোর্ট থেকে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে গাইবান্ধা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপির মতামতের জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে, কিন্তু মতামত না পাওয়ার আগেই সেখানে তিনি হাট বসান এবং পুলিশের সঙ্গে জনতা ও ইজারাদারদের এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটে।’
তিনি বলেন, ‘এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’