বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস। দ্বীপে যাওয়া-আসার একমাত্র পথ নাফ নদী, তবে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতে একের পর এক গুলিবর্ষণের ঘটনায় টানা ছয় থেকে সাত দিন ধরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে বন্ধ রয়েছে নৌ চলাচল।
খাদ্য ও পণ্যবাহী বোট চলাচল বন্ধে দ্বীপে খাদ্য পৌঁছাতে না পারায় ও মজুদকৃত খাবার প্রায় শেষ হয়ে যাওয়ায় খাদ্য সংকটে ভুগছেন সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারা।
এরই মধ্যে মঙ্গলবার টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনগামী রোগী বহনকারী স্পিড বোটকে লক্ষ্য করে গুলির ঘটনা ঘটেছে, তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে স্পিড বোটটি নাফ নদের মোহনায় নাইক্ষ্যংদিয়াতে পৌঁছালে এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংদিয়া থেকে সেন্টমার্টিনগামী পণ্যবাহী ট্রলার এবং বাংলাদেশের নির্বাচনি কর্মকর্তাদের ওপর গুলি ছোড়া হয়। ওই এলাকাটি বর্তমানে আরাকান আর্মির দখলে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ওই গোষ্ঠীর সদস্যরাই গুলি ছুড়েছে বলে ধারণা করছেন তারা।
গুলির বিষয়ে বোট মালিক সমিতির সেক্রেটারি ছৈয়দ আলম বলেন, ‘টেকনাফ থেকে চিকিৎসা শেষে স্পিডবোটে সেন্টমার্টিনে ফিরছিলেন কয়েকজন। এ সময় স্পিড বোটটি লক্ষ্য করে মিয়ানমার থেকে গুলি করা হয়েছে। আগে মিয়ানমার সীমান্ত থেকে গুলি করা হলেও আজ ছোট ডিঙি নৌকায় করে নদীতে নেমে গুলি করা হয়েছে।
‘এ সময় স্পিডবোটে থাকা যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন, তবে তারা সেন্টমার্টিনে নিরাপদে পৌঁছেছেন, কিন্তু সেন্টমার্টিনবাসী খাদ্যপণ্য সংকটে পড়ে গেছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি খুবই খারাপ। এর পরিপ্রেক্ষিতে দ্বীপে অবস্থানরত মানুষ খাদ্য সংকটে পড়বে। সেখানে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী নাকি বিদ্রোহীরা গুলি চালাচ্ছে তাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।’
এদিকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের ফলে সেন্টমার্টিনে দেখা দিচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য সংকট। খাদ্য ও পণ্যবাহী বোট চলাচল করতে না পারায় সেন্টমার্টিনের দোকানগুলোতে যেমন মজুদকৃত খাদ্যপণ্য শেষ হতে চলেছে; তেমনি সেই সুযোগে কিছু ব্যবসায়ী পণ্যের দাম দ্বিগুণ নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দ্রুত সমাধান না হলে দ্বীপবাসীর জন্য খাদ্য, চিকিৎসাসহ অন্য সমস্যা বাড়তে পারে বলে ধারণা স্থানীয়দের।
সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন বলেন , ‘সাগরে মাঝে দ্বীপ হয়ে আমরা দুর্দশার মধ্যে পড়েছি। আজকে পাঁচ ছয় দিন ধরেই সেন্টমার্টিনে খাবার বলতে কিছু নেই। এরকম হলে ১০ হাজার মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ নেই এখন। সেন্টমার্টিনে দোকান এবং ফার্মেসি প্রাথমিক চিকিৎসা ও বন্ধ হয়ে গেছে। টেকনাফ থেকে যে নাফ নদী পথ দিয়ে আসতে হয়। সেখানে মিয়ানমার বাহিনী টহল দিচ্ছে, সে পথ দিয়ে আসলে গুলি করে।’
এভাবে চলতে থাকলে সামনে আরও কঠিন পরিস্থিতি হবে জানিয়ে তিনি সরকারের প্রতি অনুরোধ করেন বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে এখনও নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে খাদ্যপণ্যসহ কোনো মালামাল আনা যাচ্ছে না। অনেক দোকান খালি পড়ে আছে, এতে দ্বীপে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এটি দ্রুত সমাধান না হলে এ সংকট বিকট আকার ধারণ করতে পারে।’