ঢাকার সাভারে দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে নিখোঁজ এক ব্যক্তিকে হত্যার পর মরদেহ ঘরের মেঝেতে পুঁতে রাখা হয়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে অভিযান চালাচ্ছে গোয়েন্দা পুলিশ। সোমবার সকাল থেকে বিকেল সন্ধ্যা পর্যন্ত সাভার পৌরসভার আনন্দপুরে চিহ্নিত মাদক কারবারি মো. স্বপনের বাড়িতে এই অভিযান চলে।
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা তল্লাশি চালানোর বিষয়টি নিশ্চিত করলেও মরদেহ পাওয়া গেছে কি না সে বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল সোমবার সকাল ১১টায় ওই বাড়িতে ঢুকে অভিযান শুরু করে। এ সময় ‘মাদক সম্রাট’ হিসেবে পরিচিত স্বপনের দোতলা বাড়ির সামনের সড়কটিও বাঁশ দিয়ে আটকে চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। কোনো সাংবাদিককেও বাড়ির ভেতরে যেতে দেয়া হয়নি।
এক বছর আগে নিখোঁজ গার্মেন্টকর্মী টোনোকে হত্যা করে মাদক কারবারি স্বপন তার বাড়ির মেঝেতে পুঁতে রেখেছে বলে অভিযোগ। ছবি: নিউজবাংলা
বাড়িটির সামনে অবস্থানরত নিখোঁজ মোফাজ্জল হোসেন টোনোর চাচা বরকত মিয়া বলেন, ‘গত বছরের ১৯ এপ্রিল সাভারের ইমান্দিপুর এলাকায় বাসার পাশে থেকে নিখোঁজ হয় আমার ভাতিজা গার্মেন্টকর্মী তোফাজ্জল হোসেন টোনো। তারপর অনেক জায়গায় খোঁজ করেও তার সন্ধান না পেয়ে ২১ এপ্রিল সাভার মডেল থানায় জিডি করি। সবশেষ ডিবি পুলিশ ও র্যাবের শরণাপন্ন হয়েও ভাতিজার সন্ধান পাইনি।
‘এক বছর পর আজ (সোমবার) স্বপনের বাড়িতে পুলিশ তল্লাশি চালানোর খবর পেয়ে আমরা এখানে ছুটে এসেছি। সকাল থেকেই বাড়ির সামনে অপেক্ষা করছি। কিন্তু পুলিশ আমাদের ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না। আমাদের ধারণা, এক বছর আগে আমার ভাতিজা টোনোকে হত্যার পর এখানে লাশ পুতে রেখে বাড়ি নির্মাণ করেছে স্বপন।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বপন এলাকায় মাদক সম্রাট নামে খ্যাত। ওই সময় মাদক ব্যবসায় বাধা দেয়ার কারণেই স্বপন আমার ভাতিজাকে গুম করে হত্যা করেছে। আমরা এর বিচার চাই।’
এদিকে আনন্দপুর মহল্লায় স্বপনের বাড়ি ঘিরে রাখার পর থেকে কৌতূহলী এলাকাবাসী সেখানে ভিড় জমায়। অনেকেই বলছেন, বাবা শাহজাহান মিয়ার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার পরিচয়কে পুঁজি করে এলাকায় মাদকের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলো স্বপন। তার ভয়ে এলাকার সবাই তটস্থ ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, ‘আমি এই এলাকায় সবার আগে বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছি। তিন বছর আগেও স্বপন আড়াই হাজার টাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতো। বাসা ভাড়ার টাকা দিতে না পারায় এলাকায় সালিশ করে তাকে বের করে দেয়া হয়েছিল ওই সময়। ‘এরপর মাদক ইয়াবা বিক্রি করে রাতারাতি অঢেল সম্পদের মালিক বনে যায় সে। আনন্দপুরে ৫ শতাংশ জমির ওপর এই দোতলা বাড়িটি বছরখানেক আগে নির্মাণ করে সে। তবে এখানে সে থাকত না। মূলত এখানে সে মাদকের কারবার পরিচালনা করতো।’
তিনি বলেন, ‘এই বাড়ি ছাড়াও স্বপনের বিরুলিয়া ও মজিদপুরসহ অন্য স্থানে চার-পাঁচটি বাড়ি রয়েছে বলে শুনেছি। আজ আনন্দপুর এলাকায় তার বাড়িতে সকাল থেকে ডিবি পুলিশ তল্লাশি শুরু করে। শুনেছি, এই বাড়ির ভেতরে একাধিক মানুষকে হত্যা করে লাশ গুম করেছে স্বপন।’
এদিকে সকাল থেকেই দোতলা বাড়ির প্রধান ফটক আটকে ভেতরে তল্লাশি চালাতে দেখা গেছে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যদের। ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুবাশশিরা হাবীব খান অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এছাড়া ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের ওসি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ (বিপ্লব) ছাড়াও পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তা রয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, স্বপন এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি। প্রতিদিন অন্তত ৬০০-৭০০ ইয়াবা বিক্রি করত সে। গোপন খবরে তাকে আটক করতে গেলে তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা এমন পরিচয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে হয়রানির মিথ্যা অভিযোগ করতো। এ কারণেই হয়তো সে এতোদিন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল।
ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের ওসি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ (বিপ্লব) বলেন, ‘আনন্দপুর এলাকার একটি বাড়িতে আমরা অবস্থান করছি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আমরা অনুসন্ধান চালাচ্ছি। এখনও নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। আমরা পরবর্তীতে বিস্তারিত জানাব।’
প্রসঙ্গত, সীমা বেগম নামে এক নারীর সহযোগিতায় ১৩ মে মাদক কারবারি স্বপনের বিরুলিয়ার বাড়িতে অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এসময় বিরুলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি হামিদ মিয়াসহ স্বপনের স্ত্রী পপি আক্তারকে ২০০ পিস ইয়াবাসহ আটক করা হয়।
ওই ঘটনার পর ২ জুন নিখোঁজ হন সীমা বেগম। এ ঘটনায় ৬ জুন স্বপনের সহযোগী সাইফুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেয়া তথ্যমতে স্বপনের বিরুলিয়ার বাড়ির পাশে মাটিচাপা অবস্থায় সীমা বেগমের মরদেহ উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ।