কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে মিয়ানমারের সন্ত্রাসী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) শীর্ষ পাঁচ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে কয়েকটি বন্দুক, গুলি ও বিস্ফোরক।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী মো. শহিদুল ইসলাম ওরফে মৌলভী অলি আকিজও রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে বহুল আলোচিত রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মহিবুল্লাহ, সেভেন মার্ডার ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা হত্যায় সরাসরি অংশগ্রহণ এবং হত্যা, অস্ত্র, অপহরণসহ ২১টির বেশি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
সোমবার দুপুরে র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন।
তিনি জানান, রোববার মধ্যরাতে উখিয়া উপজেলার মধুরছড়া ৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আস্তানা হিসেবে ব্যবহৃত একটি পরিত্যক্ত ঘরে এই অভিযান চালানো হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন- উখিয়া উপজেলার ৫ নম্বর ক্যাম্পের মৃত আবুল বাশারের ছেলে মো. শহিদুল ইসলাম ওরফে মৌলভী অলি আকিজ, ৬ নম্বর ক্যাম্পের মৌলভী আনোয়ারের ছেলে মো. ফয়সাল ওরফে মাস্টার ফয়সেল, ২০ নম্বর ক্যাম্পের মৃত মৌলভী রহমত উল্লাহর ছেলে হাফেজ ফয়জুর রহমান, ৮ নম্বর ক্যাম্পের মৃত করিম উল্লাহর ছেলে মো. সালাম ওরফে মাস্টার সালাম ও ২২ নম্বর ক্যাম্পের আনু মিয়ার ছেলে মো. জুবায়ের।
অভিযানে উদ্ধার হয়েছে বিদেশি একটি পিস্তল, দেশীয় তৈরি দুটি বন্দুক, ১০টি কার্তুজ, দুই কেজি বিস্ফোরক দ্রব্য, তিনটি মোবাইল ফোন সেট ও নগদ আড়াই হাজার টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘র্যাবের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল যে আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী দীর্ঘ সময় ধরে মিয়ানমারে পালিয়ে আত্মগোপনে থাকলেও ১৯ মে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফিরেছে। আরসার শীর্ষ কমান্ডার আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনি এবং সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ওস্তাদ খালেদের নির্দেশনাক্রমে এই সন্ত্রাসী ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারের নতুন পরিকল্পনা নিয়ে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে।’
র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, রোববার মধ্যরাতে গোপন খবর আসে যে উখিয়া উপজেলার ৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসার শীর্ষ নেতা মৌলভী আকিজসহ ৮/১০ জন আরসা সদস্য অবস্থান করছে এবং আরসার আস্তানা হিসেবে ব্যবহৃত একটি পরিত্যক্ত ঘরে বৈঠক করছে।
তথ্য নিশ্চিত হয়ে সেখানে অভিযান চালানো হয়। র্যাবের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছলে আরসার সদস্যরা অতর্কিত গুলি ছুড়তে থাকে। আত্মরক্ষার্থে র্যাব সদস্যরাও পাল্টা গুলি ছোড়েন। এক পর্যায়ে অস্ত্রসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কর্নেল সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যমতে, মৌলভী অলি আকিজ ২০১৭ সালে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ৫ নম্বর ক্যাম্পে সপরিবারে বসবাস শুরু করে। জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করেছে যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করায় ওস্তাদ খালেদের নির্দেশে রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মহিবুল্লাহকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিল সে। তাছাড়া মতাদর্শিক দ্বন্দ্বে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর সেভেন মার্ডারেও সে সরাসরি অংশ নেয়।
‘এছাড়াও ২০২২ সালে গোয়েন্দা সংস্থা ও র্যাবের মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানের সময় আরসা সন্ত্রাসীদের হামলায় গোয়েন্দা সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিহত হন। ওই সন্ত্রাসী হামলায় একজন র্যাব সদস্য গুরুতর আহত হন। ওই হত্যাকাণ্ডেও এই অলি আকিজ সরাসরি জড়িত ছিল।’
তিনি জানান, অলি আকিজের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় ১৩টি হত্যা, একটি অস্ত্র, দুটি অপহরণ, দুটি এসল্ট, একটি ডাকাতি এবং বিস্ফোরক আইনে একটি মামলাসহ বিভিন্ন অপরাধে সর্বমোট ২১টি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার অপর চারজনও আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী। তাদের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা রয়েছে।
এ ব্যাপারে মামলা করে গ্রেপ্তারদের উখিয়া থানা পুলিশে হস্তান্তরের তথ্য জানিয়ে র্যাব অধিনায়ক বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন কারণে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক ২০২৩ সালে ৬৪ জন এবং ২০২৪ সালের এ পর্যন্ত ২০ জন হত্যার শিকার হয়েছে।
‘আর এই সময়কালে র্যাব অভিযান চালিয়ে আরসার ১১২ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। তাদের কাছ থেকে ৫১ দশমিক ৭১ কেজি বিস্ফোরক, পাঁচটি গ্রেনেড, তিনটি রাইফেল গ্রেনেড, ১০টি দেশীয় তৈরি হ্যান্ড গ্রেনেড, ১৩টি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, ৫৪টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, ১৬৮ রাউন্ড গুলি/কার্তুজ, ৬৭ রাউন্ড গুলির খোসা, চারটি আইডি ও ৪৮টি ককটেল উদ্ধার করা হয়।