ঝিনাইদহের শৈলকূপা থানায় হামলা করে এজাহারভুক্ত আসামি ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালিয়েছে এলাকাবাসী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ২০/২৫ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছুড়েছে। রোববার বিকেলের এই ঘটনায় ১০ পুলিশ সদস্যসহ কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছেন।
আহতদের মধ্যে আব্দুস সালাম, ইকবাল হোসাইন ও তরিকুল ইসলাম মিনাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপর এক পুলিশ সদস্যকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকায় রেফার করা হয়েছে। বাকিদের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত মুস্তাক শিকদার মারামারি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। তিনি ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের মৃত আব্দুস সাত্তার শিকদারের ছেলে এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী বলে জানা গেছে।
হামলার খবর পেয়ে ঝিনাইদহ থেকে পুলিশ সুপার আজিম উল আহসান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) ইমরান জাকারিয়া শৈলকূপা থানায় ছুটে যান। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন।
হামলায় আহত পুলিশ সদস্যদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ছবি: নিউজবাংলা
সরেজমিনে জানা গেছে, মারামারি মামলার এজাহার নামীয় আসামি মুস্তাক শিকদারকে রোববার সকালে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। বিকেলের দিকে ধলহারা গ্রাম এবং আশপাশের এলাকার পাঁচ শতাধিক লোক ঢাল, ভেলা, লাঠি ও রামদা নিয়ে থানায় হামলা চালায়। হামলাকারীরা চারদিক থেকে থানায় ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে।
হামলাকারীদের লাঠি ও ইটপাটকেলের আঘাতে ১০ পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হণ। তাদেরকে দ্রুত ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল ও বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে একজনকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকায় রেফার করা হয়েছে।
ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় হামলাকারী পক্ষেও কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। সে সময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। হামলাকারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। পুরো থানা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ ২০ থেকে ২৫ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছুড়ে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ ক’জন জানান, ৭ জুন সন্ধ্যায় শৈলকূপার কবিরপুরে ঝিনাইদহ-১ আসনের (উপনির্বাচনে) নবনির্বাচিত এমপি নায়েব আলী জোয়ার্দ্দারের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ছিল। ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শৈলকূপা পৌরসভার মেয়র কাজী আশরাফুল আজম। বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি শৈলকূপা থানার ওসি সফিকুল আজম চৌধুরীকে গলায় গামছা দিয়ে বিতাড়িত করার ঘোষণা দেন।
মেয়র আশরাফুল আজম ওই অনুষ্ঠানে বলেন, ‘এই দুর্নীতিবাজ ওসি সন্ত্রাস করছে। আমরা চাই অতি সত্বর দুর্নীতিবাজ প্রশাসন বিশেষ করে এই ওসি এখান থেকে চলে যাক। তা না হলে গলায় গামছা বেঁধে তাকে আমরা বিতাড়িত করব।’
পৌর মেয়রের ওই বক্তব্যের পর থেকেই শেলকূপায় পুলিশবিরোধী একটি মোর্চা গড়ে ওঠে। মারামারি মামলার এক আসামিকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনতাই করতে পাঁচ শতাধিক মানুষের এমন হামলা মেয়র আশরাফুল আজমের ওই বক্তব্যেরই জের বলে অনেকে জানিয়েছেন।
এদিকে ওই বক্ত্যব্যের জন্য মেয়র আশরাফুল আজমের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য রোববার ঝিনাইদহ জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অন্যদিকে সম্প্রতি ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচন ও শৈলকূপা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই শৈলকূপায় পরাজিত প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে লুটপাট করা হচ্ছে। প্রতিপক্ষ অনেক আওয়ামী লীগ কর্মী ভোটের পর বাড়িছাড়া রয়েছেন।
শৈলকূপা থানার ওসি ওইসব বাড়ি-ঘরে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় তার বিরুদ্ধে এতো ক্ষোভ বলে পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার আজিম উল আহসান জানান, হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান চলছে। পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত রয়েছে।