পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন গোপালগঞ্জের ‘সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কের’ পুকুর থেকে প্রায় ৬০০ কেজি মাছ চুরির চেষ্টায় মামলা হয়েছে।
গোপালগঞ্জের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. সোহরাব হোসেন সোহেল বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে সদর থানায় এই মামলা করেন।
মামলায় রিসোর্টের হ্যাচারি কর্মকর্তা সফিকুল ইসলামসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
দুদকের গোপালগঞ্জের উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহমান শনিবার দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কের পুকুরের মাছসহ বিভিন্ন সম্পদ চুরি হচ্ছে বলে দুদক কর্মকর্তারা খবর পান। বিষয়টি দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহের নির্দেশনা দেন।
নির্দেশনা অনুযায়ী দুদকের একটি টিম শুক্রবার গভীর রাতে সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কে যায়। টিমের সদস্যরা তখন রিসোর্টের ভেতরে ২০ একরের একটি পুকুর থেকে মাছ ধরতে দেখেন।
তিনি জানান, দুদক টিম আসার খবর পেয়ে আসামিসহ অন্যরা পালিয়ে যান। এ সময় ৫৫৫ কেজি তেলাপিয়া ও সাড়ে ৩৭ কেজি কাতলা মাছ জব্দ করা হয়। পরে তা নিলামে তুলে ৮৩ হাজার ৭৫৪ টাকায় বিক্রি করা হয়। ওই অর্থ সরকারি খাতে জমা দেয়া হয়েছে।
দুদকের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘গভীর রাতে মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত জেলেদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রিসোর্টে দায়িত্বরত মৎস্য কর্মকর্তা সফিকুল ইসলামের নির্দেশে তারা মাছ ধরেছেন। এ ঘটনায় সফিকুল ইসলামসহ আরও অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে গোপালগঞ্জ সদর থানায় মামলা করা হয়েছে।
রিসোর্ট বুঝে নিয়ে রাতে প্রশাসনের মাইকিং
এদিকে বেনজীর আহমেদের সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কটি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে প্রশাসন। শুক্রবার সন্ধ্যায় দুদকের একটি টিম গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে এর নিয়ন্ত্রণ বুঝিয়ে দেয়। এর মধ্য দিয়ে বাস্তবায়িত হলো আদালতের ‘ক্রোক’ আদেশ।
জানা গেছে, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ১১৯টি দলিলে উল্লিখিত সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেয় আদালত। এরপর দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৬ জুন এসব সম্পত্তি দেখভালের জন্য তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগের জন্য নতুন করে আদেশ দেয় আদালত।
শুক্রবার সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে অবস্থিত বেনজীরের মালিকানাধীন সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্ক এবং সাভানা অ্যাগ্রো ফার্মের জন্য তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক, জেলা কৃষি কর্মকর্তা ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয় দুদক।
তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগের বিষয়টি রাত ১২টার দিকে মাইকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার বাবলী শবনম।
জানা গেছে, গোপালগঞ্জে ৬৪টি দলিলের ৬২১ বিঘা জমি ক্রোকের আদেশে থাকলেও বেনজীরের দলিল ছাড়া দখলকৃত কয়েক শ’ বিঘা জমিও নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে প্রশাসন।
তবে দুদক ও প্রশাসন বলছে, তদন্ত শেষে দলিল ছাড়া দখলকৃত জমি প্রকৃত মালিকদের বুঝিয়ে দেয়া হবে।