গাজীপুরের কালিয়াকৈরে প্রকাশ্যে ছাত্রলীগ নেতা আল আমিনকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে ৯ বছর আগে একই স্থানে একই কায়দায় প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়েছিল যুবলীগ নেতা রফিকুলকেও।
যুবলীগ নেতার হত্যার বিচার শেষ না হতেই বৃহস্পতিবার আবার ছাত্রলীগ নেতা হত্যার শিকার হলেন। এই হত্যার বিচার কবে হবে, তা নিয়ে সংশয়ে আছে নিহতের পরিবার।
এলাকাবাসী, নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক মোতালেব হোসেন ও গৃহিনী আছিয়া বেগম দম্পতির এক ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে আল আমিন সবার বড়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করতেন। সেই রাজনীতিই কাল হলো আল আমিনের।
গত বুধবার ওই কলেজের এইচএসসি পরিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানে আল আমিন ও তার সমর্থকদের সঙ্গে অন্য ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের কথা কাটাকাটি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর জেরে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় তাকে। এ সময় কামরুল হাসান নামে আরেক ছাত্রলীগ সদস্যকে কুপিয়ে আহত করা হয়। পরে হত্যাকারীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা মোতালেব হোসেন বাদী হয়ে রাতে কালিয়াকৈর থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় কালিয়াকৈর পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি ও ওই কলেজের ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইমন খান ও ওই কলেজ শাখার ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাসানসহ ১৮জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও অনেককে আসামি করা হয়। কিন্তু এখও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
স্থানীয়রা জানান, ছাত্রলীগ নেতা আল আমিন যেখানে হত্যার শিকার হয়েছেন, ২০১৫ সালের ২১ আগস্ট একই স্থানে উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলামকেও একই কায়দায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। মরদেহ নিয়ে কালিয়াকৈর উপজেলার সাহেব বাজার এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও কালিয়াকৈর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে প্রতিবাদ সভা করা হয় তখন।
ঘটনার পর দিন নিহতের বড় ভাই আব্দুল মোতালেব মিয়া বাদী হয়ে কালিয়াকৈর থানায় একটি মামলা করেন। কিন্তু রাজনৈতিক রেষারেষি ও তদন্তের হেরফেরে ওই মামলাটি তিনবার নারাজি দেয়া হয়েছিল। এর ফাঁকে আড়ালে চলে যান অনেক রাঘব-বোয়াল নেতা। দীর্ঘদিন পর ওই মামলার চার্জশিট হলেও ৯ বছর ধরে ন্যায় বিচারের অপেক্ষায় তার পরিবার।
ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষ হতে না হতেই একই কায়দায় আবার ছাত্রলীগ নেতা আল আমিনকে হত্যা। কবে বিচার পাবে তার পরিবার- এমন প্রশ্ন ছুড়ছেন নানা মহলের মানুষ।
শুধু যুবলীগ নেতা রফিকুল ও ছাত্রলীগ নেতা আল আমিনই নয়, আরও কয়েকটি হত্যাকাণ্ড দীর্ঘদিন বিচারের জন্য ঝুলে থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তারা জানিয়েছেন, কখনও মরদেহ নিয়ে সড়ক-মহাসড়কে বিক্ষোভ, অর্ধদিবস হরতাল কর্মসূচি, প্রতিবাদ সভা করলেও বছরের পর বছর ধরে চলে বিচারকার্য।
নিহত ছাত্রলীগ নেতা আল আমিনের মামা হারুন মিয়া জানান, নিহতের বাবা বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেছেন। তারা এর বিচার চান।
নিহত যুবলীগ নেতা রফিকুলের বড় ভাই আব্দুল মোতালেব মিয়া বলেন, আমার ভাইকে প্রকাশ্যে যেভাবে হত্যা করেছে, ঠিক একই কায়দায় ওই ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু অর্থের বিনিময়ে ভাই হত্যার মামলা থেকে অনেককে বাদ দেয়া হয়েছে। তবে আমার ভাই হত্যার বিচার আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছি।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম নাসিম বলেন, আল আমিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বাবা বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেছেন। ওই মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া ওই স্থানে যুবলীগ নেতা রফিকুল হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি আমার জানা নেই।