নেত্রকোণার পূর্বধলায় জীবিত তিন ব্যক্তিকে মৃত্যু সনদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলার তিন ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
এর ফলে তাদের নামের বরাদ্দকৃত বয়স্ক ও বিধবা ভাতাও বন্ধ হয়ে গেছে। এ বিষয় ওই তিনজনের মধ্যে দুইজন পূর্বধলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগকারীরা জানান, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার, সমাজসেবা অফিসার মিলে তাদেরকে তিনজনকে মৃত দেখিয়ে তাদের জায়গায় অপরজনকে ভাতাভোগীর সুবিধা করে দিয়েছেন।
অভিযুক্ত চেয়ারম্যানদের দাবি, তাদের ভুলের কারণে এমনটি হয়েছে।
যে তিন ব্যক্তিকে মৃতের সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে তারা হলেন নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলার খলিশাউড় ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গড়ুয়াকান্দা গ্রামের মো. হযরত আলী (৭১)। অপরজন হলেন হোগলা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জামিরাকান্দা গ্রামের জহুরা খাতুন (৭৭) ও পূর্বধলা সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের উকুয়াকান্দা গ্রামের খাদিজা আক্তার।
হযরত আলী লিখিত অভিযোগে দাবি করেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে বয়স্ক ভাতা পেতেন। গত দুই সেশনে তার মোবাইল অ্যাকাউন্টে টাকা না আসায় বিষয়টি সমাজসেবা অফিসে খোঁজ নেন। সেখানে সমাজসেবা অফিসার জানান, খলিশাউড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কমল কৃষ্ণ সরকারের দেয়া প্রত্যয়ন মোতাবেক তাকে মৃত দেখানো হয়েছে। পরবর্তীতে তার নামে বরাদ্দকৃত বয়স্ক ভাতা অন্য উপকারভোগীর নামে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
জহুরা খাতুনের অভিযোগ, তিনিও নিয়মিত বয়স্ক ভাতাভোগী ছিলেন। ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমাজসেবা অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তাকেও ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম আকন্দ খোকনের স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নে মৃত দেখিয়ে ভাতা বন্ধ করে দিয়ে জহুরা খাতুনের পরিবর্তে হালিমা খাতুনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাকে এক বছর ধরে ভাতা দেয়া হচ্ছে।
বিষয়টি তিনি তার ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে অবহিত করেন।
খাদিজা আক্তার ২০১৯ সালে যাচাইবাছাই শেষে বিধবা ভাতার কার্ড পান। ইতোপূর্বে ব্যাংক ও পরে মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমে ২০২৩ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত টাকা উত্তোলন করেছেন।
তিনি জানান, এ ভাতার টাকায় তিনি নিজের ব্যয় বহন করতেন। গত বছরের মার্চ মাসের পর থেকে তিনি ভাতা পাচ্ছিলেন না। ঘটনাটি জানতে তিনি সমাজসেবা অফিসে খবর নিতে গেলে তাকে বলা হয়, ‘আপনি তো মারা গেছেন। তাই ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে।’
এ বিষয়ে জানতে পূর্বধলা সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্যকে ফোন করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
পূর্বধলা উপজেলার খলিশাউড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কমল কৃষ্ণ সরকার জানান, একই গ্রামের হযরত আলী নামে দুই ব্যক্তির এক ব্যক্তি মারা গেলে ভুলবশত জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখানো হয়েছে। এই ভুল সংশোধনের জন্য ইতোমধ্যে সমাজসেবা অফিসে কাগজ পাঠানো হয়েছে।
পূর্বধলা উপজেলার হোগলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম আকন্দ খোকন জানান, তার অজান্তে ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ভুলবশত এমনটি করেছেন, তবে ভুল সংশোধনের জন্য ইতোমধ্যে কাগজপত্র নিয়ে সমাজসেবা অফিসে যোগাযোগ করেছেন তিনি এবং অতি দ্রুতই এ সমস্যার সমাধন হবে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা মৃত্যু সনদ ইস্যু করে প্রতিস্থাপনের সুপারিশ পাঠানোর প্রেক্ষিতে উক্ত ভাতাভোগী দুইজনকে মৃত দেখিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। আমরা যেহেতু প্রকৃত বিষয়টি জানতে পেরেছি কয়েকদিনের মধ্যে সংশোধনের ব্যবস্থা দেব।’
এ বিষয়ে নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খবিরুল আহসান জানান, ‘জীবিত ব্যক্তিকে মৃত্যু সনদ দিয়ে তার ভাতা কেটে দিয়ে অন্য জনের নামে প্রতিস্থাপনের বিষয়ে একটি অভিযোগ আমি পেয়েছি। এর আগেও হয়রানির বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে খাদিজা আক্তার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সমাজসেবা বিভাগকে সংশোধনের জন্য পাঠানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে, ঘটনার সত্যতা সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান ইউএনও।