ময়মনসিংহে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ওমর ফারুক সৌরভ হত্যার ঘটনায় তার চাচা ইলিয়াস উদ্দিনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের পর মরদেহ গুমের জন্য ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটিও উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন- সৌরভের ৫৫ বছর বয়সী চাচা ইলিয়াস আলী, তার ৩০ বছর বয়সী শ্যালক আহাদুজ্জামান ফারুক এবং সৌরভের লাশ বহনকারী ৬৫ বছর বয়সী প্রাইভেটকারের চালক আব্দুল হান্নান।
মঙ্গলবার দুপুরে ময়মনসিংহ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
নিহত ওমর ফারুক সৌরভের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার তারাটি গ্রামে। তার বাবা ইউসুফ আলী চাকরি করেন ডাক বিভাগে। মা মাহমুদা আক্তার পারুল গৃহিণী। ২৩ বছর বয়সী সৌরভ গুলশানের বেসরকারি প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার পরিবার স্থায়ীভাবে ঢাকায় মতিঝিলে বসবাস করে।
ময়মনসিংহে সেতুর নিচ থেকে ট্রলি ব্যাগে থাকা দুই পা ও মাথা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় সৌরভের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ছবি: নিউজবাংলা
সংবাদ সম্মেলনে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা বলেন, ‘তিন বছর আগে সৌরভের চাচাতো বোন ইসরাত জাহান ইভার বিয়ে হয় আব্রাহাম নামে একজনের সঙ্গে। তিনি কানাডায় স্টুডেন্ট ভিসায় পড়াশোনা করছেন। তার সঙ্গে ডিভোর্সও হয়নি।
‘এদিকে সৌরভের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে প্রেম চলছিল তার চাচাত বোন ইভার। পরিবারকে না জানিয়ে ১২ মে ঢাকার একটি বাসায় তারা বিয়ে করেন। বিষয়টি জানাজানি হতেই উভয় পরিবারের মধ্যে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। ১৬ মে ইলিয়াস আলী তার একমাত্র মেয়ে ইভাকে কানাডায় পাঠিয়ে দেন। এর মধ্যেই ইভার বাবা ইলিয়াস আলী আপন বড় ভাই সৌরভের বাবা ইউসুফ আলীকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছিলেন।’ মাছুম আহাম্মদ ভূঞা বলেন, সৌরভ ঢাকা থেকে ১ জুন ময়মনসিংহে আসেন। এরপর ইলিয়াস তার ছেলের মাধ্যমে ফোন করে সৌরভকে নগরীর গোয়ালকান্দিতে ভাড়া বাসায় নিয়ে আসেন। পরে পরিকল্পনামাফিক ইলিয়াস আলী ও তার শ্যালক আহাদুজ্জামান ফারুক ধারালো অস্ত্র দিয়ে সৌরভকে হত্যা করেন। পরে চাপাতি দিয়ে দেহ থেকে মাথা ও দুই পা আলাদা করা হয়। এরপর ট্রলিব্যাগে মরদেহসহ হাত-পা এবং পলিথিনে মাথা মুড়িয়ে ব্যাগে ভরে প্রাইভেটকার ভাড়া করে এনে মরদেহ সদরের সীমান্তবর্তী মনতলা ব্রিজের নিচে সুতিয়া নদীতে ফেলে দেয়া হয়।
পুলিশ সুপার জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যায় জড়িতদের পালিয়ে থাকার অবস্থান জানতে পেরে গোয়েন্দা পুলিশ ও থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। এ হত্যায় আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ময়মনসিংহ সদরের সীমান্তবর্তী মনতলা ব্রিজের নিচে সুতিয়া নদী থেকে ২ জুন সকালে সৌরভের চার টুকরো করা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সুতিয়া নদী থেকে কালো রঙের একটি ট্রলিব্যাগ থেকে তিন টুকরো এবং পাশেই একটি বাজারের ব্যাগে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় মাথা উদ্ধার করা হয়।
ওইদিন রাতেই সৌরভের বাবা ইউসুফ আলী বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন। পরদিন রাতে গ্রামের বাড়িতে ওমর ফারুক সৌরভের মরদেহ দাফন করা হয়।