নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার আমিশাপাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আসাদ্দেকুল ফেরদৌসের বিরুদ্ধে ঘুষ নেয়া, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কাজ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে জানান সেবাগ্রহীতারা।
তারা জানান, অনিয়ম, ঘুষ, দুর্নীতি, হয়রানিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে আমিশাপাড়া ইউনিয়ন তহশিলদারের বিরুদ্ধে। ভূমি অফিসের চৌকাঠ পেরুলেই তহশিলদারের নিজের করা আইন মানতে হয় ভূমিসেবা নিতে যাওয়া সাধারণ মানুষকে।
তহশিলদার আসাদ্দেকুল ফেরদৌস পার্শ্ববর্তী চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়ন থেকে সাড়ে ৩ বছর আগে এখানে যোগদান করেন।
সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ, নামজারি ও খাজনা আদায়সহ ভূমি সংশ্লিষ্ট কাজে এ অফিসে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়। প্রথমেই জমির কাগজপত্রের ত্রুটি দেখিয়ে হয়রানি করতে থাকেন তিনি। পরে তার দাবিকৃত অতিরিক্ত টাকা দিলেই কাজ হয়ে যায় নিমিষে। এই অফিসে বসেই তহশিলদার নিজেই নামজারি নথির চুক্তি করে থাকেন জমির মালিকদের সঙ্গে। একেকটি নথি ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন তিনি।
অফিসে ঝাড়ুদার গণেশ রায় ও তার ছেলে রকির মাধ্যমে আসাদ্দেকুল ফেরদৌস ঘুষ লেনদেন করে থাকেন বলে অভিযোগ আছে। ঝাড়ুদারকে দিয়েই তিনি অফিসের গুরুত্বপূর্ণ নথি উপজেলা ভূমি অফিসে আনা নেয়া করে থাকেন। আর তার ছেলে রকিকে দিয়ে নাম জারি আবেদন, বিভিন্ন প্রতিবেদন লিখিয়ে থাকেন।
অভিযোগকারীরা জানান, উপজেলার আমিশাপাড়া ইউনিয়ন তহশিলদার এখানে যোগদানের পর থেকে সেবা নিতে আসা লোকজনের কাছ থেকে নামজারি, দাখিলাসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করে দেয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেন। সেবা গ্রহীতাদের হয়রানি করে থাকেন। তহশিল অফিসটি বাজারে হওয়ায় প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সেবাগ্রহীতাকে এ অফিসে আসতে দেখা যায়।
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার আমিশাপাড়া ইউনিয়ন তহশিল অফিসে গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বাহিরের সিঁড়িতে বসে থাকতে দেখা যায় নূর মোহাম্মদ নামে একজন জমির মালিককে। কথা হয় তার সঙ্গে।
তিনি অভিযোগ করেন, এক বছর পূর্বে তার জমি নামজারি করতে আবেদন করেন, কিন্তু তহশিলদারের দাবিকৃত ঘুষের টাকা না দেয়ায় নামজারি করতে টালবাহানা শুরু করেন। কাগজপত্রের ত্রুটির অজুহাত দেখিয়ে তহশিলদার আসাদ্দেকুল ফেরদৌস নামজারি করে দেননি। তার খরিদকৃত অন্য দাগের ২ শতাংশ সম্পত্তি খারিজ করতে তহশিলদার ৮ হাজার টাকা নেন।
আমিশাপাড়া ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের জমির মালিক আবু সিদ্দিক অভিযোগ করে জানান, বিগত দুই মাস পূর্বে সাড়ে ১৯ শতাংশ সম্পত্তি নামজারি করতে তহশিল অফিসে যান। তহশিলদার আবেদন করতে এক হাজার ৫০০ টাকা নেন। এখন কাগজপত্রের ত্রুটি দেখিয়ে ঘুরাঘুরি করছেন।
টাকা দিতে চাইলে তহশিলদার বললেন, কাজ হওয়ার পর টাকা নেবেন। তার নামজারির আবেদন নাম্বার তিনি বলতে পারছেন না।
এ বিষয়ে আমিশাপাড়া ইউনিয়ন তহশিলদার আসাদ্দেকুল ফেরদৌস জানান, তিনি কোনো অতিরিক্ত টাকা লেনদেন করেন না, তবে এ অফিসের ঝাড়ুদার গনেশ রায় ও তার ছেলে রকিকে টাকা দিয়ে কাজ করান।
সোনাইমুড়ী উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহিন মিয়া বলেন, ‘ইতোপূর্বে গণমাধ্যমে ভূমি অফিস নিয়ে লেখালেখি হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে, তবে কোনো অনিয়ম থাকলে আমাকে জানান।’