বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তবর্তী কক্সবাজারের রামুতে বিজিবির মাদক ও চোরাচালানবিরোধী টহল দলের ওপর গুলি চালিয়েছে চোরাকারবারিরা। এ ঘটনায় আত্মরক্ষার্থে বিজিবির পাল্টা গুলিতে নেজাম উদ্দিন নামে এক চোরাকারবারি নিহত হয়েছে।
গোলাগুলি চলার সময় বিজিবির ব্যবহৃত তিনটি মোটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগ এবং একটি মোটর সাইকেল ভাংচুর করা হয়েছে।
গুলিতে চোরাকারবারি চক্রের একজন নিহত হওয়ার ব্যাপারে বিজিবির পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সোমবার ভোরে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তবর্তী কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের মরিচ্যাচর এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিরা নিশ্চিত করেছেন।
সোমবার দুপুর ১টার দিকে বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে বিজিবির মাদক ও চোরাচালানবিরোধী নিয়মিত টহল দলের ওপর চোরাকারবারিরা গুলিবর্ষণ করে। এ সময় বিজিবির মোটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনায় আত্মরক্ষার্থে বিজিবির সদস্যরাও পাল্টা গুলিবর্ষণ করেন। ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু পরিমাণ ইয়াবা ও বার্মিজ সিগারেট জব্দ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় কেউ নিহত হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত নন জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ নিহত হলে তার মরদেহ পাওয়া যেত।
গর্জনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বাবুল জানান, বিজিবির সঙ্গে চিহ্নিত চোরাকারবারিদের গোলাগুলি হয়েছে। এ সময় বিজিবির তিনটি মোটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগ এবং একটি মোটর সাইকেল ভাংচুর করা হয়।
এ ঘটনায় কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের নেজাম উদ্দিন নামের এক চোরাকারবারি নিহত হয়েছে বলে শোনা গেছে। নিহতের মরদেহ তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা নিয়ে গেছে।
গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম জানান, বিজিবির সঙ্গে চোরাকারবারিদের গোলাগুলির ঘটনায় একজন নিহত হয়েছে বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছে। কিন্তু মরদেহ পাওয়া যায়নি। বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।
এদিকে কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের ঘোনাপাড়া এলাকা থেকে দুপুর ১টার দিকে নেজাম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানোর তথ্য জানিয়েছেন খুরুশকুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহাজাহান সিদ্দিকী।
তিনি জানান, কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী এলাকার বহুল আলোচিত ডাকাত আবুল বশর মারা যাওয়ার পর তাদের পরিবার কয়েক বছর আগে খুরুশকুলের ঘোনাপাড়া এলাকায় এসে বসবাস শুরু করে। সোমবার সকালে আবুল বশরের ছেলে নেজামের মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসে তার চক্রের সদস্যরা। খবর পেয়ে গুলিবিদ্ধ মরদেহটি উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে এবং পুলিশকে জানানো হয়েছে।
চেয়ারম্যান শাহাজাহান আরও জানান, নেজাম ডাকাত গর্জনিয়ায় বিজিবির সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হয়েছে বলে নানাভাবে শোনা যাচ্ছে। বলা হচ্ছে ওখান থেকে মরদেহটি সহযোগীরা বাড়িতে নিয়ে এসেছিল।
তিনি বলেন, ‘আবুল বশর একজন চিহ্নিত ডাকাত ছিলেন। তার ছেলেরাও ডাকাতি এবং চোরাকারবারে জড়িত বলে এলাকার লোকজন জানেন।’
তবে ঘটনার ব্যাপারে নিহতের বাবা আবুল বশর বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুরে আমার ছেলে নেজাম উদ্দিন রামুর গর্জনিয়ায় বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে যায়। রোববার রাত ১২টার দিকে মোবাইল ফোনে ছেলের সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছে। সকালে নেজাম উদ্দিনের বাডড়ি ফিরে আসার কথা হয়েছিল। কিন্তু সোমবার সকালে ঘুম থেকে জাগার পর খবর পাই যে গর্জনিয়ায় বিজিবির গুলিতে নেজাম নিহত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয়দের কাছ থেকে জেনেছি যে মিয়ানমার থেকে সিগারেট পাচারকে কেন্দ্র করে বিজিবির গুলিতে ছেলে মারা গেছে। পরে বেলা ১০টার দিকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি অটোরিকশাযোগে নেজামের লাশ বাড়িতে পৌঁছে দেয়। ওই ব্যক্তি জানিয়েছে, গর্জনিয়া এলাকার কয়েকজন যুবক লাশটি গাড়িতে তুলে দিয়েছে।’
অল্প কিছু সিগারেটের জন্য বিজিবি ছেলেকে গুলি করতে পারে তা বিশ্বাস হয় না বলে উল্লেখ করেন আবুল বশর। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের ও পারিবারিক প্রতিপক্ষের কতিপয় লোকজন বিজিবির সঙ্গে যোগসাজশ করে এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে।’
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানান, খুরুশকুলে নেজাম নামের একজনের মরদেহ বাড়িতে থাকার তথ্য পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। যদি গুলিবিদ্ধ হয়ে থাকে তাহলে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে। ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে কার গুলিতে কোথায় ওই ব্যক্তি নিহত হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশ কাজ করছে।’
এদিকে নেজামের মরদেহ সোমবার বেলা ২টা ১০ মিনিটে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পৌঁছেছে বলে হাসপাতাল সূত্র নিশ্চিত করেছে।