কিশোরগঞ্জের ভৈরবে রেলওয়ে সেতু পার হওয়ার সময়ে চলন্ত ট্রেন থেকে মেঘনায় পড়ে নিখোঁজ যুবকের মরদেহ দুদিন পর উদ্ধার করা হয়েছে।
রোববার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নরসিংদীর রায়পুরা থানার মেঘনাবাজ এলাকার নদী থেকে তার ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে রায়পুরা থানার নৌপুলিশ।
পুলিশ ও নিহতের স্বজন সূত্রে জানা যায়, গত ৩১ মে বিকেলে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মেঘনায় রেলওয়ে সেতু পার হওয়ার সময়ে চলন্ত ট্রেন থেকে নদীতে পড়ে সোহেল তানভীর (২০) নামের এক যুবক নিখোঁজ হন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখউড়া থানার দেবগ্রামের মো. মেরাজ মিয়ার ছেলে।
জীবিকা নির্বাহের জন্য মালয়েশিয়ায় যাওয়ার কথা ছিল ওই যুবকের। কিন্তু অনিবার্য কারণে মালয়েশিয়া যাওয়ার ফ্লাইট বাতিল হয়ে যায় তার। এরপর ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশন থেকে নোয়াখালীগামী উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনে তার বাবার সাথে নিজ বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় ফিরছিলেন তানভীর।
পথে ভৈরব মেঘনায় রেলওয়ে সেতু ওপর দিয়ে ট্রেন পাড়ি দেয়ার সময় হঠাৎ চলন্ত ট্রেনের দরজা থেকে তানভীর মেঘনা নদীতে পড়ে যান। এর পর সাথে থাকা তার বাবা পরবর্তী স্টেশনে নেমে ভৈরব মেঘনা নদীতে নিখোঁজ সন্তানকে খোঁজাখুজি করে কোনো সন্ধান পাননি। নিখোঁজের দুদিন পর নরসিংদী জেলার রায়পুরার থানার মেঘনাবাজ এলাকা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে নিখোঁজের স্বজন আব্দুল কাইয়ুম জানান, পরিবারে ছোট ছেলে তানভীর। লেখা পড়ায় মনোযোগী না হওয়ায় বাবার সঙ্গে মুদি দোকান চালাতো। স্বপ্ন ছিল প্রবাসে যাবে। তাই প্রবাসে যাওয়ার জন্য ব্যবস্থা নেয়। গত শুক্রবার বিকেলে তার মালয়েশিয়া যাওয়ার ফ্লাইট ছিল। কিন্তু কোনো কারণে যেতে পারেনি।
তিনি বলেন, আমরা একই গাড়িতে করে বাড়ি যাচ্ছিলাম। গাড়িতে অনেক গরম ছিল। সে তার আসন ছেড়ে বাতাস পেতে ট্রেনের দরজার পাশে গিয়েছিল। ট্রেনে অনেক ভিড় ছিল। হঠাৎ একজন যাত্রী বলল, তানভীর অসাবধানতায় হঠাৎ চলন্ত ট্রেন হতে মেঘনা নদীতে পড়ে যায়। পড়ার সময় ব্রিজের রডের সাথে ধাক্কা খেয়ে মাথায় আঘাত পেয়ে পড়েছে। পরে দুদিন খোঁজাখুজির পর নদীতে ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত যুবকের বাবা মেরাজ মিয়া বলেন, পরিবারের হাল ধরার জন্য মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য ছেলেকে নিয়ে বিমানবন্দরে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর জানতে পারি ছেলের ফ্লাইট বাতিল হয়ে যায়। পরে ছেলেকে নিয়ে ট্রেনে চড়ে বাড়িতে ফিরছিলাম। ট্রেনে আমার পিছনের সিটে বসা ছিল তানভীর। আমি বুঝতেই পারিনি ছেলেটা কীভাবে দরজার পাশে গেল কিভাবে পড়ে গেল। ছেলের স্বপ্ন ছিল বিদেশ যাবে । কিন্তু বিদেশ আর যাওয়া হলো না।
এ বিষয়ে ভৈরব নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (ওসি) মো.মনিরুজ্জামান বলেন, চলন্ত ট্রেন থেকে মেঘনা নদীর পানিতে পড়ে গিয়ে যুবক নিখোঁজের দুদিন পর রায়পুরা থানার মেঘনাবাজ এলাকা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরবর্তীতে যুবকের স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।