ইউটিউব দেখে গারো পাহাড়ে মরুভূমির ফল সাম্মাম চাষ করেছেন শেরপুরের আনোয়ার। গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে এ ফল চাষ করে সফল হওয়ায় এবার তিনি বাণিজ্যিকভাবে সাম্মাম চাষ সফলতা পেয়েছেন।
সুস্বাদু ফল সাম্মাম। এটি মূলত উচ্চ ফলনশীল ফল। দেখতে অনেকটা বাতাবি লেবুর মতো হলেও ভেতরে অনেকটা তরমুজের মতো। মূলত ফলটি মরুভূমিতে হয়ে থাকে।
আনোয়ারের বাগানে গিয়ে দেখা যায়, সুতা দিয়ে বানানো মাচায় ফুলে-ফলে ভরপুর হয়ে আছে সাম্মাম। বিভিন্ন আকারের কাঁচা-আধাপাকা কয়েকশ ফল ঝুলছে ও মাটিতে আছে। সবুজ থেকে হলুদ বর্ণ ধারণ করছে বেশ কিছু ফল। গাছের গোড়ার অংশের মাটি মালচিং পেপার দিয়ে ঢাকা।
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তবর্তী গোমড়া গ্রামের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন। পড়াশুনা শেষ করে ঢাকায় বেসরকারি একটি সংস্থাতে চাকরি নেন। চাকরির সঙ্গে তিনি নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেননি। অবশেষে চাকরি ছেড়ে বাড়িতে চলে আসেন।
তিনি জানান, বাড়ি ফিরে বাবার সঙ্গে কৃষিকাজে যুক্ত হন। এরপর চিন্তা করেন ব্যতিক্রম কিছু চাষাবাদের। বাবা মোজাম্মেল হকের সহযোগিতা নিয়েই শুরু করেন এ ফলের চাষ। গত বছর ইউটিউব দেখে নিজের ১০ শতাংশ জমিতে সাম্মাম চাষ করেছিলেন। বীজসহ সবকিছু মিলিয়ে তখন খরচ হয় ২৫ হাজার টাকা।
প্রথম বছরেই ফল বিক্রি করে দুই গুনেরও বেশি টাকা লাভ হয় বলে জানান আনোয়ার। আর তাই এ বছর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও সহযোগিতায় ৩৩ শতাংশ জমিতে সাম্মাম চাষ করেন তরুণ এ কৃষি উদ্যোক্তা।
ইতোমধ্যে ক্ষেতে এসেছে কাঙ্ক্ষিত ফল। ফল বিক্রিও শুরু করেছেন তিনি। তার আশা এবার লক্ষাধিক টাকার ওপরে লাভ করবেন।
ফলটির দুটি জাত লাগিয়েছেন আনোয়ার। ফলের বাইরের অংশ সবুজ আর ভেতরের অংশ হলুদ। খেতে খুব মিষ্টি ও রসালো। প্রতিটি সাম্মাম দুই কেজি পর্যন্ত ওজন হচ্ছে।
সাম্মাম চাষি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রকমেলন (সাম্মাম) মধ্যপ্রাচ্যের ফল। এটা খুব সফট একটা ফল। এটা আমি আগের বছর প্রথমবার ইউটিউব দেখে চাষ করেছিলাম। অভিজ্ঞতার কিছুটা অভাব থাকায় সে বছর বেশি লাভ করতে পারি নাই। পরে ঝিনাইগাতী কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে জৈব উপায়ে চাষাবাদ করে আমি এবার লাভ বেশি করতে পারছি।
‘আমি এবার ৩৩ শতাংশ রকমেলন লাগিয়েছি। যে পরিমাণ ধরেছে, প্রথমবার ঢাকার বাজারে তুলেই অনেকটা লাভবান হতে পারছি।’
আনোয়ারের বাবা মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমার ছেলে আনোয়ার এ ফল চাষ করেছে। আমি এ বাগানের দেখাশোনা করি। আর ফলনও অনেক ভালো হয়েছে। আমরা এ ফল চাষ করে লাভবান হয়েছি। আমার ছেলে চাকরির চেয়ে বাড়িতে থেকে এ ফল চাষ করেই ভালো সফলতা পাচ্ছে।’
ভিন দেশি রসালো ফল উৎপাদনের খবরে প্রতি দিন তার ক্ষেত দেখতে এসে এ ফল চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন আশপাশের কৃষকরা।
কৃষক খাইরুল বলেন, ‘আমার অনেক জমিন খালি পরে আছে। যদি কৃষি অফিস আমাকে সাহায্য করে আমিও এই ফল লাগামু।’
কৃষক মেহেদী বলেন, ‘আমি তো আমার জমিতে সবজি লাগাই, কিন্তু এই ফলডা মেলা লাভ। দামও অনেক। ২০০ টাকা কেজি। আমিও এ ফল চাষ করমু সামনের বার।’
ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার বলেন, ‘রকমেলন বা সাম্মাম একটি উচ্চমূল্যের বিদেশি ফসল, গত কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশে চাষাবাদ হচ্ছে। বৃহওর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় আমরা একটি প্রদর্শনী দিয়েছিলাম।
‘গত বছরে একই কৃষক ফসলটি চাষ করেছিলেন। তিনি চাষাবাদ করে লাভবান। অন্য কোন কৃষি উদ্যোক্তা যদি রকমেলন চাষে আগ্রহী হন, তাহলে তাকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা দেয়া হবে।’
ফলটির চাষ সম্প্রসারণ করলে স্থানীয় কৃষকরা যেমন অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে, তেমনি অন্যদিকে পুষ্টিচাহিদা পূরণে ও বাজারে নতুন ফলের সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে, এমনটাই জানালেন এ কর্মকর্তা।
তিনি আরও জানান, গারো পাহাড়ের মাটির একটি বিশেষ গুণ রয়েছে, এখানে পানি আটকে থাকে না। তাই এখানে সাম্মাম বা রকমেলন জাতীয় ফলগুলো চাষ ভালো হবে। গারো পাহাড়ের পতিত জমিতে সাম্মাম চাষ স্থানীয় কৃষকদের আকৃষ্ট করছে।