কোরবানির ঈদ হিসেবে পরিচিত ঈদুল আজহা আসতে বাকি আর কয়েক সপ্তাহ। এ সময়ে কোরবানির পশু কিনতে যেমন পরিকল্পনা শুরু করেছেন ক্রেতারা, তেমনই খামারিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন পশুর পরিচর্যায়।
গরুর খাবারের দামের ঊর্ধ্বগতির পাশাপাশি চলমান তাপপ্রবাহ ভাবিয়ে তুলছে খামারিদের। সেই সঙ্গে দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে বিদেশি গরুর আমদানিও। তারা শঙ্কায় আছেন গরুর ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে।
খামারিরা জানান, তাপপ্রবাহের কারণে গরুর রোগ-ব্যাধি তুলনামূলক বেড়েছে। গরমে অসুস্থ হচ্ছে অনেক পশু। সেই সঙ্গে খাবারের বাড়তি দামের কারণে গরুর উৎপাদন খরচও বেড়ে যাবে।
তাদের ভাষ্য, এবার কোরবানির ঈদে বাড়বে গরুর দাম। সেই বাড়তি দামে গরু বিক্রি করতে না পারলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে।
তেরাইল গ্রামের গরুর খামারি সম্রাট আলি বলেন, ‘গত বছর আমার ২৫টির মতো গরু ছিল, যেগুলোর ওজন ছয় মণ থেকে ১২ মণ পযর্ন্ত, তবে এবার প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে গরু পালন শুরুতেই কিছু কমেছে। এবার আমার খামারে ৯টি গরু আছে, যেগুলোর ওজন সাত মণ থেকে শুরু করে ১৩ মণ পযর্ন্ত হবে।
‘আমি দেশীয় পদ্ধতিতে গরু পালন করায় আমার খরচ কিছুটা বেড়েছে। আমার এ গরুগুলো মণপ্রতি ৩০ হাজার থেকে ৩২ হাজার টাকা হিসাবে বিক্রি করতে পারলে লাভবান হতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘দুশ্চিন্তায় আছি, বাজারে গরু উঠিয়ে ন্যায্য দাম পাব কি না, আবার বিদেশি গরু দেশের বাজারে ঢুকে বাজার দখল করে নেয় কি না।’
আরেক খামারি আবু বক্কর বলেন, ‘আমাদের খামারে গত বছরও ২০০ পিসের ওপরে কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত ছিল। সেখানে এ বছর আছে ৫০টি।
‘গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে রোগ-ব্যাধি, যা চিকিৎসার মাধ্যমেও নিরাময় হচ্ছে না। অনেক গরু মারা গিয়েছে। আবার অধিকাংশ গরু তুলনামূলক বেড়েছে কম।’
তিনি বলেন, ‘জেলাজুড়ে যে গরমের প্রভাব, সব মিলিয়ে এ বছর একেবারে বেসামাল অবস্থা। আবার যদি খামারে থাকা গরুগুলোর ন্যায্য দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হই, তাহলে ব্যাবসা বন্ধ করতে হবে।’
ব্যবসায়ী জামরুল বলেন, ‘গরুর দাম যেভাবে ওঠানামা করছে, তাতে আমাদের ব্যাবসা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আমাদের আস্ত গরুর মাংস কেনা পড়ছে ৭২০ টাকা করে। আর কেটেকুটে বিক্রির সময় ৭৭০ টাকা দাম চাইলে ক্রেতারা দাম শুনে চমকে ওঠেন। আবার এত বেশি দামে বিক্রির পরও খামারিরা বলছেন, লোকসান হচ্ছে তাদের।’
গরুর খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই বলছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
বিভাগের এক কর্মকর্তা বলছেন, এ বছর তাপপ্রবাহের কারণে ফসলে প্রভাব পড়েছে, এটা ঠিক। তারপরও এখানে গরুর খাবারের কোনো ঘাটতি নেই। চাষি ও খামারিরা যদি গরুকে সবুজ ঘাসও খাওয়ায়, তাহলে বাজার থেকে কেনা খাবারের বাড়তি দামের কোনো প্রভাব পড়বে না।
এ ছাড়া জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে নেপিয়ারসহ বিভিন্ন জাতের ঘাসের কাটিং বা কলম চাষি ও খামারিদের দেয়া হয়েছে। তারা এই কাটিং থেকে ঘাস চাষ করতে পারবেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারিচুল আবিদ জানান, এ বছর কোরবানির ঈদ উপলক্ষে মেহেরপুরের ৪৫ হাজার গরু ও এক লাখ ২৮ হাজার ৮০টি ছাগল প্রস্তুত করেছেন ৩০ হাজার খামারি। এগুলোর আনুমানিক দাম ধরা হয়েছে প্রায় এক হাজার ১০০ কোটি টাকা।
তিনি জানান, জেলায় পশুর চাহিদা ৯০ হাজার ১৯৩টি। বাকি পশু চলে যাবে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায়।
এ কর্মকর্তা বলেন, ‘জেলায় প্রাকৃতিক গো-খাদ্যের কমতি নেই। তাই বাজারে গো-খাদ্যের দাম বাড়লে এখানকার চাষি ও খামারিদের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না।’