বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সিলেটের আরও দুই উপজেলা প্লাবিত, নগরেও ঢুকছে পানি

  •    
  • ৩১ মে, ২০২৪ ১৪:৫৫

সিলেটের সাত উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে পানিবন্দি অবস্থায় আছে জেলার প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ।

সিলেটে বন্যায় নতুন করে আরও দুটি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। নতুন করে পানি প্রবেশ করেছে বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলায়।

এ নিয়ে জেলার সাত উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে পানিবন্দি অবস্থায় আছে জেলার প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ।

এদিকে বৃহস্পতিবার রাত থেকে নদী উপচে সিলেট নগরেও পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। নগরের নদী তীরবর্তী কয়েকটি এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

এমন পরিস্থিতিতে সব কর্মীর ছুটি বাতিল করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন। জরুরি সেবার জন্য চালু করা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।

সিলেটে বৃষ্টি থেমেছে, বৃষ্টিপাত হচ্ছে মেঘালয়ে

টানা কয়েক দিন বৃষ্টির পর শুক্রবার সকাল থেকে সিলেটে বৃষ্টি থেমেছে। রোদেরও দেখা মিলেছে, তবে বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটের উজানে ভারতের মেঘালয়ে।

গত ২৪ ঘণ্টায় মেঘালয়ের সবচেয়ে বৃষ্টিপ্রবণ অঞ্চল চেরাপুঞ্জিতে ১৯৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব।

টানা বৃষ্টি ও ঢলে বুধবার রাতেই তলিয়ে যায় ভারত সীমান্তবর্তী সিলেটের পাঁচ উপজেলা জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জকিগঞ্জ। পরের দিন বৃহস্পতিবার রাতে নতুন করে প্লাবিত হয় বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা।

বন্যাকবলিত এলাকায় ৫৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে চালু করেছে জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে প্লাবিত সাত উপজেলার ৩৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত চার হাজার ৮০২ জন আশ্রয় নিয়েছে। নগরের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখার কথা জানিয়েছে সিটি করপোরেশন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সিলেট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে, জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারে কুশিয়ারার পানি দুটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর মধ্যে অমলসিদ পয়েন্টে ২০৭ সেন্টিমিটার ও শেওরা পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।

পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দিপক রঞ্জন দাস বলেন, ‘সিলেটে এবারের বন্যা দেখা দিয়েছে ঢলের কারণে। উজানে বৃষ্টি থামলে ঢলও বন্ধ হবে। তখন বন্যা পরিস্থিতিরও উন্নতি হবে।’

বন্যায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে জৈন্তাপুর উপজেলা। এ উপজেলার ৭৫ শতাংশ এলাকাই পানিতে তলিয়ে যায়। পানি উঠে গেছে বেশির ভাগ বাড়িতে।

বাড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় জৈন্তাপুরের ফতেহপুর এলাকার বৃদ্ধা হাওয়া বিবি আশ্রয় নিয়েছেন স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে।

তিনি বলেন, ‘আগেও বাড়িতে পানি উঠছে, কিন্তু এত দ্রুত পানি বাড়তে জীবনে দেখিনি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পানিতে সব তলিয়ে গেল।

‘পানি দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় ঘর থেকে কিছুই নিয়ে আসতে পারিনি। আসবাবপত্র সব পানিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে।’

জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী জানান, উপজেলার টিলা এলাকা ছাড়া বাকি সব এলাকাই প্লাবিত। কোথাও কোথাও মানুষের বাড়ির চাল পর্যন্ত পানিতে ডুবে গেছে। বন্যা কবলিতদের জন্য চাল বরাদ্দ দেয়া হলেও অনেকের রান্না করে খাওয়ার মতো শুকনো জায়গাও নেই।

তিনি বলেন, বন্যা কবলিত মানুষজনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, তবে গৃহপালিত পশু উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বন্যায় গবাদিপশুর ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।

এদিকে প্লাবিত উপজেলাগুলোতে শুক্রবারও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাল, শুকনা খাবার ও অর্থ বরাদ্দ করা হয়। বৃহস্পতিবার বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও দুর্গত মানুষের খোঁজ নিতে বিভিন্ন উপজেলায় যান জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান।

তিনি জানান, বন্যাদুর্গতদের সহায়তায় সেনাবাহিনী প্রস্তুত।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্লাবিত এলাকায় ১ হাজার বস্তা শুকনা খাবার, ৭৫ টন চাল ও নগদ তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আরও বরাদ্দের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ইউনিয়নভিত্তিক মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে ।

নগরে ঢুকছে পানি

সুরমা নদী উপচে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে সিলেট নগরের নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। শুক্রবার নগরের জামতলা, তালতলা, মাছিমপুর, ছড়ারপাড় তোপখানা, সোবহানীঘাটসহ বেশ কয়েকটি এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। পানি ঢুকে পড়েছে তালতলা এলাকার সিলেট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়ে।

ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘বন্যার পানি ওঠার কারণে এ স্টেশন থেকে সব যন্ত্রপাতি আলমপুর স্টেশনে নিয়ে রাখা হয়েছে। পানি আরও বাড়লে গাড়িগুলোও অন্যত্র নিয়ে রাখতে হবে। সেই সঙ্গে কর্মীদের আপাতত সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে অস্থায়ীভাবে থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

সিলেট সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে ফায়ার সার্ভিসের মূল স্টেশন। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শান্তনু দত্ত বলেন, ‘তালতলা ফায়ার স্টেশন ছাড়াও নগরের বাগবাড়ি, উপশহর এলাকার নিম্নাঞ্চলে পানি উঠতে শুরু করেছে।’

সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, উজানের পানি নেমে আসায় নদীতে পানি বেড়েছে। যেখানে ছড়ার পানি নদীতে যাওয়ার কথা, সেখানে নদীর পানি ছড়া উপচে নগরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।

জরুরি সভা

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়ায় বৃহস্পতিবার বিকেলে জরুরি সভা করে সিটি করপোরেশন।

সভায় নগরের কয়েকটি ওয়ার্ডকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং ওই ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলোতে কাউন্সিলরদের মাধ্যমে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুতের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। শুক্রবার থেকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি এবং প্রাথমিক চিকিৎসাসামগ্রী পাঠানো শুরু হয়।

ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় উদ্ধারকাজের জন্য নৌকার ব্যবস্থা, নিম্নাঞ্চলের বিদ্যুৎকেন্দ্র, উপকেন্দ্রগুলো বন্যার পানিতে যাতে ডুবে না যায়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিভাগের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সহযোগিতা প্রদান, নগরবাসীর জরুরি সেবার জন্য ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম চালুসহ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলে রান্না করা খাবার পরিবেশনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সভায় জনস্বার্থে সিলেট সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ, পানি, স্বাস্থ্য ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শাখার সব কর্মীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এরই মধ্যে প্রাথমিকভাবে তিন টন চিড়া, তিন টন মুড়ি, গুড়, খাবার পানি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও ওরাল স্যালাইন কেনা হয়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘উজানের পানি নেমে আসায় নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে সিলেট নগরের ছড়ার পানি নদীতে পড়ার কথা, সেখানে নদীর পানি উল্টো ছড়া উপচে নগরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।'

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোবারক হোসেন জানান, বন্যার্তদের সহায়তায় উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে মেডিক্যাল টিম গঠন করা হচ্ছে। বন্যাদুর্গত মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সবার কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হবে।

এ বিভাগের আরো খবর