গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ভূমিহীনদের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার কালামপুর খাজারডেক এলাকায় বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দফায় দফায় টাকা দাবি ও চাহিদা মতো টাকা না দিলে স্থাপনা ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষ হয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
এলাকাবাসী, ভুমিহীন পরিবার ও বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর খাজারডেক এলাকায় বেশকিছু সংখ্যালঘু ভূমিহীন পরিবার বনবিভাগের জমিতে বসবাস করে আসছে। তাদের সংসারের খরচ যোগাতে চন্দ্রা-কালামপুর-সুরিচালা সড়কের খাজারডেক এলাকায় দীর্ঘদিন বনের জমিতে অবৈধভাবে ২০-২৫টি দোকানপাট করেন তারা।
স্থানীয় দালাল ও বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টাকা-পয়সা দিয়েই ভূমিহীনরা এসব দোকানপাট শুরু করেন। মাসখানেক আগে ওই সড়কের প্রশস্তকরণ কাজ শুরু করে কালিয়াকৈর পৌরসভা। পরে পৌর কর্তৃপক্ষের অনুরোধে সংখ্যালঘু ভূমিহীন পরিবারের লোকজন তাদের দোকানপাটের উভয় পাশে ৪ ফুট করে পেছনে সরিয়ে দেয়।
খবর পেয়ে স্থানীয় অর্জুন নামে বনের দালাল ও চন্দ্রা বিট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একাধিকবার সেখানে যান। এরপর তারা দফায় দফায় ৫ লাখ টাকা দাবি করেন।
ভূমিহীনদের অভিযোগ, তাদের হুমকির মুখে পড়ে দোকানের মালিকরা সবাই মিলে চাঁদা তুলে ৩ লাখ টাকা দেয়া হয়। এরপর গত বুধবার পুনরায় এক লাখ টাকা দাবি করা হয়। ওই টাকা না পেয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হ্যামার, কাটার, সাবল ও লাঠি নিয়ে ওই এলাকায় যান।
এ সময় তারা দোকানের মালিকদের টেনে-হেচড়ে বাইরে বের করে এবং দোকানপাট ভাঙচুর চালান। এক পর্যায়ে ভূমিহীন লোকজন ও বনবিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ সময় কোনো উপায় না পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সেখান থেকে পালিয়ে চন্দ্রা বিট কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান, স্টাফ আলী হোসেন, তোফাজ্জল হোসেন, আলা উদ্দিন, জামাল হোসেন, জহিরুল, আল মামুন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান।
সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিলেও অবস্থার অবনতি হলে আলাউদ্দিন, আল মামুন ও জামাল হোসেনকে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ওই সংঘর্ষের ঘটনায় ওই বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এবং ভূমিহীনদের মধ্যে দিলীপ বিশ্বাস, মনির হোসেন, সুভা রানী, বাতাসী রানী, রাম বর্মনসহ প্রায় ২০জন আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছেন এলাকাবাসী। পরে ওই ভূমিহীনরা উপজেলা নির্বাহী অফিসে অভিযোগ দিতে যান।
ভুক্তভোগী বাতাসী রানী সরকার বলেন, আমরা ভুমিহীন সংখ্যালঘু পরিবারের লোকজন। আমরা সরকারি বনের জমিতে বসবাস করে আসছি। আর সংসার চালানোর জন্য বনের জমিতে দোকানপাট করেছি। তখন স্থানীয় দালাল ও বন অফিসের টাকা দিয়ে এসব দোকানপাট করি। টাকা না দেয়ায় দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে।
স্বপন মিয়া বলেন, আমি সেলুনের ব্যবসা করে খাই। তারপরও টাকা না পেয়ে দোকান থেকে টেনে-হেচড়ে বের করে আমারে পিটাইছে।
কাপড়ের দোকানদার আবু বকর বলেন, দোকান প্রতি ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা করে তুলে তাদের ৩ লাখ টাকা দিয়েছি। তারপরও তারা দোকানপাট ভাঙচুর করেছে। তারা হামলা ও মারধরে আমাদের ভুমিহীন অনেকে আহত হয়েছেন।
টাকা নেওয়া ও টাকা চাওয়ার কথা অস্বীকার করে স্থানীয় চন্দ্রা বিট অফিসের কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বলেন, তাদের স্থাপনার বিষয়ে ওপরে অভিযোগ দিলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে আমরা সেখানে উচ্ছেদ করতে যাই। কিন্তু তারা অতর্কিত হামলা চালালে আমরা সাতজন আহত হয়েছি। এদের মধ্যে একজনের মাথা ফেটেছে ও একজনের হাত ভেঙে গেছে।
কালিয়াকৈর থানার ওসি (তদন্ত) তরিকুল ইসলাম জানান, এ ঘটনাটি মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। এখনো কোনো পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ করেনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহম্মেদ জানান, ওই ঘটনাটি উভয়পক্ষ মৌখিকভবে জানিয়েছেন। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।