বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শাহজালালের মাজারে ‘প্রেমের জিকির’

  •    
  • ৩০ মে, ২০২৪ ১১:৩৩

মাজার প্রাঙ্গণে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে হয়ে বসে অসংখ্য নারী-পুরুষ। হাজার হাজার বাউল ফকির। এদের বেশিরভাগই দেশের দূর দূরান্ত থেকে এসেছিলেন এখানে।

‘পীরের মাজারে বসে কোনো রাতে বাউলের দল/যেমন হঠ্যাৎ ধরে হু হু শব্দে প্রেমের জিকির/আমার কবিতা সেই মাতালদের রাতের গজল’

সিলেটের শাহজালাল (র.) মাজারে আল মাহমুদের কবিতার এই দৃশ্যকল্পটিই যেন জীবন্ত হয়ে উঠল। মাজার প্রাঙ্গণে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে বসে অসংখ্য নারী পুরুষ। হাজার হাজার বাউল ফকির। এদের বেশিরভাগই দেশের দূর দূরান্ত থেকে এসেছিলেন এখানে।

মাথা ঝাঁকিয়ে একমনে জিকির করেন তারা। তাদের বেশিরভাগই একে অপরকে চেনেন না। জিকির আর গজলের সুরেই এক হয়ে যান তারা। পা ফেলবার জায়গাটুকু নেই মাজার প্রাঙ্গণে। তার ওপর তিন ফটক দিয়েই বানের জলের মতো মানুষ ঢুকছেন মাজারে। হাতে বিশাল লাল গিলাপ। তাদের কণ্ঠেও জিকির। এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য।

এর মধ্যেই কেউ কেউ মাজারের পুকুরের গজার মাছকে খাবার ছুড়ে দিচ্ছেন। কেউ কেউ খেলা করছেন মাজারের কবুতরের সাথে। কেউবা ধ্যানমগ্ন হয়ে আছেন প্রার্থনায়। পৌঁছে যাচ্ছেন এক অপার্থিব জগতে।

মঙ্গলবার থেকে শুরু হয় সিলেট হযরত শাহজালাল (র.) মাজারের বার্ষিক ওরস মোবারক। প্রতি বছর ১৯ ও ২০ জিলকদ দুই দিনব্যাপী এ ওরস অনুষ্ঠিত হয়। এবার ৭০৫তম বারের মতো আয়োজিত হয় ওরস। বুধবার সকালে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে ওরস শেষ হয়।

জানা যায়, ১৩০৩ সালে ৩৬০ জন আউলিয়া নিয়ে ইয়েমেন থেকে সিলেট আসেন শাহজালাল। যে তারিখে তিনি সিলেট বিজয় করেন, ছয় বছর পর ঠিক সেই একই তারিখে মৃত্যু হয় এই ধর্ম প্রচারকের। সেই থেকে তার ওফাত (মৃত্যু) দিবস ও সিলেট বিজয়দিবসটিতে ভক্তরা আয়োজন করেন ওরস মোবারকের। এই দীর্ঘ ইতিহাসে কেবল করোনার কারণে ২০২০ সালে একবার ওরস বন্ধ ছিল।

ধর্মের প্রাতিষ্ঠানিকতার বাইরে এই ওরসে দুই দিন ব্যাপী জিকির-গজলে মেতে উঠেন বাউল ফকিরে। জীবিত অবস্থায় বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমও নিয়মিত শাহজালাল মাজারের ওরসে এসে জিকিরে শরীক হতেন।

হিন্দু ও ইসলাম ধর্মের প্রাতিষ্ঠানিকতার বাইরে সুফি ও বৈষ্ণব ধারার উৎপত্তি করেছিলেন শাহজালাল ও শ্রীচৈতন্য। এদের মধ্যে প্রথমজন সুফিবাদের বাণী নিয়ে ইয়েমেন থেকে সিলেট আসেন। আর দ্বিতীয় জন বৈষ্ণববাধের বাণী নিয়ে সিলেট ছেড়ে চলে যান নদীয়ায়। ধর্মের প্রেমময় দুই ধারা সেসময় সহজেই আকৃষ্ট করে সাধারণ মানুষদের। আজও শাহজালাল মাজারে ভক্তদের উপচেপড়া ভিড় তা জানান দিয়ে যায়।

প্রতিবছরই ওরসে মাজার প্রাঙ্গণে গান গাইতে যান বাউল শিল্পী রশিদ উদ্দিন। সোমবার রাতে কথা হয় তার সাথে। রশিদ উদ্দিন বলেন, আমরা গানের মাধ্যমে স্রষ্টাকে খুঁজি। গানে গানে তার নাম নেই। প্রতিবছরই ওরসে মাজারে এসে সুরে সুরে স্রষ্টার প্রতি শুকরিয়া ও জীবের প্রতি প্রেম বিলিয়ে দেই। মানুষে মানুষে হানানাহিন বন্ধের দাবি জানাই। শাহ আবদুল করিমসহ এই অঞ্চলের সব বাউলরাই এই মাজারে এসে গান করেছেন।

ওরস উপলক্ষে কেবল মাজার নয় পুরো নগরীই সাজে সাজ সাজ রবে। ভক্ত-আশেকানদের স্বাগত জানিয়ে নগরীর বিভিন্ন মোড়ে তোরণ ও ফেস্টুন তৈরি করা হয়। মাজারের নিরাপত্তায় সাত শতাধিক পুলিশ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি মাজার কর্তৃপক্ষের আড়াই হাজার নিরাপত্তাকর্মীও নিয়োজিত ছিলেন।

ওরসের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় গিলাপ ছড়ানো। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মাজারে গিলাপ ছড়ানো চলে। সকাল থেকে গিলাপ হাতে ভক্ত-আশেকানদের ঢল নামে মাজারে। আল্লাহু, আল্লাহু ও লালে-লাল বাবা শাহজালাল ধ্বনিতে মূখরিত হয়ে ওঠে মাজার এলাকা।

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ভক্তদের পদচারণায় সরব হয়ে ওঠে পুরো নগরী। রাতে কুরআনখানি ও পুরো রাতভর চলে জিকির আজকার। একসঙ্গে চলে ভক্তিমূলক গজল। বুধবার ফজরের নামাজের সময় আখেরি মুনাজাত শেষে ভোরে শিরনি বিতরণ করা হয়।

ওরসে মাজার ও আগত ভক্ত-আশেকানদের নিরাপত্তায় মহানগর পুলিশের ৭০০ সদস্য দুইভাগে বিভক্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া মাজার কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আড়াই হাজার নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

শাহজালাল মাজারের মতওয়াল্লী সরেকওম ফতেউল্লাহ আল আমান বলেন, শাহজালালের ওরস সিলেটের একটি ঐতিহ্য। প্রতিবছর এই ওরসে লাখো মানুষের সমাগম ঘটে। নানা ধর্মের মানুষ আসেন। এবার দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করেই মানুষ এখানে জড়ো হন। ধর্মের নামে হিংসার বিরুদ্ধে সব জীবে প্রেমের আহ্বান নিয়েই এই ওরস অনুষ্ঠিত হয়।

এ বিভাগের আরো খবর