ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে দুইদিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে সিলেটে। টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটের প্রায় সবগুলো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সিলেট জেলার সবকটি নদীর পানি ইতোমধ্যে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলাজুড়ে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সিলেট কার্যালয়ের কর্মকর্তারাও।
এদিকে, গত দুদিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এই উপজেলার সবচেয়ে বড় সারী নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে।
আকস্মিক বন্যায় উপজেলার নিজপাট ইউনিয়নের গোয়াবাড়ী, বাইরাখেল, মযনাহাটি, বন্দরহাটি, মেঘলী, তিলকৈপাড়া, ডিবিরহাওর, ফুলবাড়ী, টিপরাখরা, খলারবন্দ, মাঝেরবিল, হর্নি, নয়াবাড়ী, কালিঞ্জিাদবাড়ী, জৈন্তাপুর ইউনিয়নে লামনীগ্রাম, মোয়াখাই, বিরাইমারা, মুক্তাপুর, বিরাইমারা হাওর, লক্ষীপুর, কেন্দ্রী, খারুবিল, নলজুরী, শেওলারটুক, বাওনহাওর, চারিকাটা ইউনিয়নের লাল, থুবাং, উত্তর বাউরভাগসহ বিভিন্ন গ্রাম ইতোমধ্যে পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে।
পাউবো সিলেট কার্যালয়ের তথ্যমতে, বর্ষার আগে সুরমা নদীর কানাইঘাট এলাকার পানির বিপৎসীমা ১০.৮০ সেন্টিমিটার। সেখানে বুধবার সকাল ৯টায় ছিল ১২.৪৫ সেন্টিমিটার। সুরমার সীমা ০৮.৩০ সেন্টিমিটার, বুধবার সকাল ৯টায় যা ছিল ৯.৪০ সেন্টিমিটার।
কুশিয়ারা নদীর পানি আমলশিদ পয়েন্টে পানির বিপৎসীমা হচ্ছে ১৩.০৫ সেন্টিমিটার। এই নদীর পানি বুধবার সকাল ৯টায় ছিল ১৫.২২ সেন্টিমিটার। কুশিয়ারা নদী শেওলা এলাকার সীমা ১০.৭০ সেন্টিমিটার, বুধবার সকাল ৯টায় ছিল ১১.৬৬ সেন্টিমিটার। সারি-গোয়াইন নদীর সারিঘাট পয়েন্টের বিপৎসীমা হচ্ছে ১০.৭০ সেন্টিমিটার, বুধবার সকাল ৯টায় তা ছিল ১১.২৯ সেন্টিমিটার। সারিগোয়াইন নদীর গোয়াইনঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমা ৮.৬৫ সেন্টিমিটার হলেও বুধবার সকাল ৯টায় ৯.৭৩ সেন্টিমিটার উচ্চতায় ছিল পানি।
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস বলেন, ‘আমাদের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পায় মূলত উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বৃষ্টিপাত তো আমাদের দেশেও ছিল। তাছাড়া বর্ষার আগে এমন বৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। আর বৃষ্টি হলে নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়াটাও স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।’
তিনি বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুম হিসেবে সিলেটে নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে আছে। এই পানি আরেকটু বৃদ্ধি পাবে, তারপর নেমে যাবে। তবে যেহেতু আমাদের দেশে বৃষ্টি হচ্ছে না, তাই এখন কিছুটা স্বস্তি আছে। এখন যদি ভারতের মেঘালয় বা আসামে বৃষ্টি হয় তাহলে তো পাহাড়ি ঢল আসবেই। এজন্য আমাদের বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে।’
অপরদিকে সিলেট আবহাওয়া অফিস বলছে, যেহেতু প্রাক বর্ষাকাল চলছে, তাই এখন প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হবে। বুধবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ১৪৬.১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজিব হোসেন বলেন, ‘আগামী তিনদিন সিলেটে অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।’