বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সেবার মানে নজর নেই, দাম বাড়াতে ব্যস্ত ঢাকা ওয়াসা

  •    
  • ২৯ মে, ২০২৪ ২২:৩১

১৬ বছরের ব্যবধানে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বেড়েছে প্রায় ৩০০ শতাংশ। বর্তমান সরকারের ১৬ বছরে ঠিক ১৬ বার পানির দাম বাড়ানোর রেকর্ড হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৬ সালেই দাম বাড়ানো হয় দুবার।

২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল, কারওয়ান বাজারের ওয়াসা ভবনের সামনে পরিবার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাজধানীর জুরাইন এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান। সেদিন গণমাধ্যমের ক্যামেরার চোখ ছিল তার হাতের দিকে। কারণ তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন ওয়াসার পানি দিয়ে বানানো একগ্লাস শরবত নিয়ে। তার ইচ্ছে, ঢাকা ওয়াসার তৎকালিন তথা বর্তমান এমডি তাকসিম এ খানকে সেই শরবত পান করানো। গণমাধ্যমকর্মীসহ সাধারণ মানুষও অপেক্ষা করছিলেন নাটকীয় এ ঘটনা দেখার জন্য। তবে শেষ পর্যন্ত সেই শরবত পান করেননি তাকসিম এ খান।

ওই ঘটনার পর সময় গড়িয়েছে আরও পাঁচ বছর। তবে ঢাকা ওয়াসার পানির মানের তেমন কোনো পরিবর্তন চোখে পড়েনি। ওয়াসার সাপ্লাই দেয়া পানির মান নিয়ে নগরের প্রায় প্রতিটি সচেতন বাসিন্দার অভিযোগ রয়েছে। অন্যান্য দেশের নাগরিকরা সাপ্লাই দেয়া পানি সরাসরি পান করলেও ঢাকায় সেটা ভাবতেও পারেন না বাসিন্দারা।

ওয়াসার পানির মান নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক গবেষণায় উল্লেখ্য করেছিল, নিম্নমানের কারণে নগরীর ৯৩ শতাংশ গ্রাহককে বিভিন্ন পদ্ধতিতে পানি পানের উপযোগী করে নিতে হয়। এর মধ্যে ৯১ শতাংশ গ্রাহক পানি ফুটিয়ে পান করেন।

তবে মানের ব্যাপারে ওয়াসার পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তাদের সাপ্লাই দেয়া পানি শতভাগ সুপেয়। এমনকি টিআইবির ওই গবেষণাকে প্রত্যাখান করেছিলেন এমডি তাকসিম।

তবে ঢাকার সাধারণ নাগরিকরা প্রতিনিয়ত ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ, ময়লা থাকা, স্বাভাবিক রংয়ের পানি না পাওয়ার মতো অভিযোগ করে আসছেন। শুধু মান নয়, পানির পর্যাপ্ত সরবরাহ না পাওয়া, লাইনের নানা ত্রুটি, দূষিত পানি আসা, মাঝেমধ্যেই ভৌতিক বিল, কর্মকর্তাদের উদাসিনতাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে ঢাকা ওয়াসার বিরুদ্ধে।

তবে এতসব অভিযোগের যৌক্তিক সুরাহা কিংবা পানির মান উন্নয়নে নজর না দিলেও পানির দাম বাড়াতে পিছিয়ে নেই ঢাকা ওয়াসা। সবশেষ বুধবার গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছে, পানির দাম আবারও ১০ শতাংশ বাড়ছে। এতে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য প্রতি ১ হাজার লিটার পানির দাম পড়বে ১৬ টাকা ৭০ পয়সা, যা বর্তমানে রয়েছে ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। বাণিজ্যিক গ্রাহকদের একই পরিমাণ পানি পেতে গুনতে হবে ৪৬ টাকা ২০ পয়সা, বর্তমানে যার দাম ৪২ টাকা।

নতুন করে দাম বাড়ানোর ঘোষণায় অবাক হলেন পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের বাসিন্দা মাকসুদ। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এমনিতেই নিত্যপণ্যের দামে নাজেহাল, তারা তার ওপর বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়ালে জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বাড়বে।

‘ভাইরে, আমরা তো পুরা অসহায়। কোন দিক দিয়া কখন কেডা দাম বাড়াচ্ছে তা বুঝবার উপায় নাই। খালি নিজের পকেট কাটা যাইবার লাগছে।’

তিনি জানান, পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় তার বাড়িতে ভাড়াটিয়াদের সবসময় পানি দিতে পারছেন না। এতে ভাড়াটিয়ারা প্রায়ই বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছেন।

পানি আর বিদ্যুতের দামে বর্তমানে নাজেহাল অবস্থা পল্লবী এলাকার বাসিন্দা সোহেল শেখেরও।

তিনি বলেন, ‘এখন ঢাকা শহরে থাকা এক প্রকার পাপ, সেটা ভাড়াটিয়া হোক বা বাড়ির মালিক।’

বাড়ির মালিকদের এত সমস্যা কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘বাড়ির মালিককে প্রতি বছর অনেক রকমের ফি দিতে হয়- হোল্ডিং ট্যাক্স, পানির বিল, বিদ্যুতের বিল, গ্যাস বিল আবার বাড়ির নানা প্রকার রিপেয়ারিং খরচ। এসব দিয়া সংসারের খরচ উঠাতেই হিমশিম খেতে হয়।’

কোন ইস্যু পেলেই ওয়াসার কর্মকর্তারা তাদের নানাভাবে হয়রানি করে আসছেন বলে অভিযোগ তার।

ঢাকা ওয়াসার হিসাব বলছে, ২০০৯ সালে আবাসিক পর্যায়ে প্রতি হাজার লিটার পানি কিনতে গ্রাহককে গুনতে হত ৫ টাকা ৭৫ পয়সা। চলতি বছরের জুলাইয়ে দাম বাড়লে যা দাঁড়াবে ১৬ টাকা ৭০ পয়সায়। অর্থাৎ ১৬ বছরের ব্যবধানে ওয়াসার পানির দাম বেড়েছে প্রায় ৩০০ শতাংশ।

বর্তমান সরকারের ১৬ বছরে ঠিক ১৬ বার পানির দাম বাড়ানোর রেকর্ড হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৬ সালেই দাম বাড়ানো হয় দুবার।

নতুন করে পানির দাম বাড়ানোকে পুরোপুরি অযৌক্তি বলছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বারবার দাম বাড়ানো ওয়াসার স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ। এ দাম বৃদ্ধিকে আমি বলব অযৌক্তিক, অযাচিতভাবে জনগণের ওপর বোঝা চাপানোর মতো। আমি মনে করি, ওয়াসার কর্মকর্তাদের দূর্নীতির কারণে যেসব ক্ষতি হচ্ছে, তা পোষাতেই পানির দাম বাড়ানো হচ্ছে।’

তিনি জানান, ২০১৯ সালে তাদের গবেষণায় দেখানো হয়েছে, মানহীন পানি ফোটাতে জনগণকে বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা খরচ করতে হচ্ছে।

আপনাদের গবেষণার পর ওয়াসার পানির মানের কি উন্নতি হয়েছে?- এ প্রশ্নে তার উত্তর, ‘গেল ৫ বছরে কোনো উন্নতি হয়নি। বরং দূর্নীতি আর লুটপাট আরও বেড়েছে।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘শুধুমাত্র ওয়াসার কর্মকর্তাদের দূর্নীতি বন্ধ হলেই বর্তমান দামের চেয়ে অর্ধেক দামে পানি পেতে পারে রাজধানীবাসী।’

এ বিভাগের আরো খবর