বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ নির্ভরযোগ্য নাম বলে বুধবার মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২৪’ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ নির্ভরযোগ্য নাম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ অনুসরণ করে আমরা বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছি। এ জন্য গত ৩৫ বছর ধরে বাংলাদেশ জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী প্রেরণ করে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘গত ৩৫ বছর ধরে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ এবং সক্রিয় অংশগ্রহণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। এমনকি এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে অন্য দেশ শান্তিরক্ষী পাঠাতে চায়নি, কিন্তু বাংলাদেশ সাহসের সঙ্গে সে সমস্ত জায়গায় শান্তিরক্ষী প্রেরণ করেছে। তাই শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আজ একটি দায়িত্বশীল ও নির্ভরযোগ্য নাম। আমরা সর্বজন স্বীকৃত বিশ্বের বুকে রোল মডেল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেসব দেশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনী কাজ করছে, সেসব দেশে গেলে বা তাদের রাষ্ট্রপ্রধান-সরকারপ্রধানদের সঙ্গে দেখা হলে তারা প্রত্যেকেই বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এটা শুনে গর্বে বুক ভরে যায়।’
ওই সময় বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুদ্ধ আর অস্ত্র প্রতিযোগিতায় অর্থ ব্যয় না করে দারিদ্র্য আর ক্ষুধা দূর করায় মনোযোগ দিন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দ্বন্দ্ব-সংঘাত, যুদ্ধ বিশ্বশান্তি বিঘ্নিত করছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজায় ইসরাইলের হামলায় হাজার হাজার নিরীহ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা ইত্যাদি মানবজাতির জন্য এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ঠিক জানি না এই সংঘাত বা এই যুদ্ধ মানবজাতির জন্য কী কল্যাণ বয়ে আনছে। অস্ত্র প্রতিযোগিতা প্রতিনিয়ত যত বৃদ্ধি পাচ্ছে, মানুষের জীবনও তত বেশি দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে নারী-শিশু, তারা সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে। যুবকেরা অকাতরে জীবন দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব কিছু সমাধান করতে চাই। বিশ্বের এক বিশালসংখ্যক মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে। কোটি কোটি মানুষ দুই বেলা খাবার পায় না। শিশুরা শিক্ষা পায় না, শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। যারা অস্ত্র তৈরি ও অস্ত্র প্রতিযোগিতায় এত অর্থ ব্যয় করছে, তাদের কাছে আমার আহ্বান, আমরা শান্তির কথা বলি, কিন্তু সংঘাতে লিপ্ত হই কেন?’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘এই যে অর্থ ব্যয় হচ্ছে, এই অর্থ যদি ক্ষুধার্ত মানুষের আহারের ব্যবস্থায় শিক্ষায় ব্যবহার করা হতো, চিকিৎসায় ব্যবহার করা হতো, তাহলে মানুষের জীবনমান আরও উন্নত হতো, মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচতে পারত, কিন্তু এই সংঘাত মানুষকে আরও কষ্টের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সংঘাত নয়, যদি কোনো সমস্যা থাকে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা, সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কাজ। অস্ত্র তৈরি আর প্রতিযোগিতা, এই অর্থটা যেসব দেশ এখনও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছে, সেই জলবায়ু অভিঘাত থেকে মানবজাতিকে রক্ষার জন্য সেই ফান্ডে দিতে পারে এবং ক্ষুধার্ত ও শিক্ষা বঞ্চিতদের জন্য ব্যবহার করতে পারে।’
বিশ্বশান্তি নিশ্চিত করা এখন অতীতের চেয়ে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রযুক্তির সাম্প্রতিক প্রসার ও অগ্রযাত্রার সঙ্গে বাড়ছে নতুন নতুন হুমকি। ফলে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনগুলোর শান্তিরক্ষীদের বহুমাত্রিক জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আরও বেশি নারী শান্তিরক্ষী প্রেরণের জন্য জাতিসংঘের পক্ষ থেকে আমাদের আহ্বান জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা যাতে বিশ্বের সব থেকে চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে পারে, সে হিসেবেই তাদের প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে।’
ওই সময় শাহাদাত বরণকারী শান্তিরক্ষীদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করার পাশাপাশি দায়িত্বরতদের সাফল্য কামনা করেন শেখ হাসিনা। দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনায় তাদের প্রশংসা করেন তিনি।