ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপের ৮৭ উপজেলায় ভোটগ্রহন অনুষ্ঠিত হবে বুধবার। সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এই ভোটে প্রতিনিধি বাছাইয়ে মত দেবেন ২ কোটির ৮ লাখের বেশি ভোটার। ইতোমধ্যে ভোট উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এদিকে তৃতীয় ধাপে ১০৯ উপজেলায় ভোটগ্রহণের কথা থাকলেও সোমবার ঘূর্ণিঝড় রিমালের ক্ষয়ক্ষতির কারণে প্রথমে ১৯ উপজেলা এবং পরদিন মঙ্গলবার আরও তিনটি উপজেলায় ভোট স্থগিত করেছে ইসি।
সব মিলিয়ে দুদফায় তৃতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মোট ২২ উপজেলার ভোট স্থগিত করেছে ইসি। ফলে তৃতীয় ধাপে ৮৭ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে। এসব উপজেলা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
এই ধাপে সারাদেশের ৮৭টি উপজেলার মধ্যে ১৬টিতে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে।
দুর্গম ও উপকূলীয় অঞ্চল বিবেচনায় ৪১৪ কেন্দ্রে ব্যালট পাঠানো হয়েছে মঙ্গলবার। বাকি ৭ হাজার ৩৬ কেন্দ্রে ব্যালট পৌঁছবে বুধবার সকালে। সব মিলিয়ে এ দফায় ভোট কেন্দ্র থাকবে ৭ হাজার ৪৫০টি।
ইতোমধ্যে নির্বাচন উপলক্ষে মাঠে নেমেছে পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সদস্য। সমতলে সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১৭ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে মোতায়েন থাকবে ১৯ জনের ফোর্স। আর দুর্গম ও পার্বত্য এলাকায় এই সংখ্যা আরও বেশি। এছাড়া নির্বাচনি আচরণবিধি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতি ইউনিয়নে থাকবেন একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
ইসি সূত্র জানায়, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত। প্রত্যেক উপজেলায় একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। ভোটের আগে-পরে মোট পাঁচদিনের জন্য তারা দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে বিশেষ করে বিজিবির প্রতিটি মোবাইল টিমের সঙ্গে একজন করে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন।
ইসি সূত্র আরও জানায়, ১৮ এপ্রিল তৃতীয় ধাপের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ইসি। তফসিল অনুযায়ী ১২ মে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্ধারিত সময় শেষে চূড়ান্ত হয় এক হাজার ১৫২ জন প্রার্থী। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৩৯৭ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৫৬ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী রয়েছেন ২৯৯ জন। ১৩ মে প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরু করেন প্রার্থীরা।
তবে ইতোমধ্যে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ১২ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে রয়েছেন একজন চেয়ারম্যান, চারজন ভাইস চেয়ারম্যান ও সাতজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান।
এই ধাপের ভোটে প্রচার-প্রচারণার সময় আচরণবিধি লঙ্ঘনের বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে ইসি। এ ছাড়া প্রচারণায় নেমে সংঘাত, হুমকি এবং প্রার্থীর পক্ষে জনপ্রতিনিধিদের প্রভাব বিস্তারের অভিযোগও রয়েছে।
তবে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর উপজেলা নির্বাচন বর্জনের পর ভোটের লড়াই চলছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যেই। ইতিমধ্যে ভোটের প্রচারণায় নেমে বেশ কিছু উপজেলায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন উপজেলায় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় নামায় কয়েকজন সংসদ সদস্যসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে।
তবে নির্বাচন কমিশন সূত্র বলছে, সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। আচরণবিধি প্রতিপালনের লক্ষ্যে এরই মধ্যে ৮৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রসঙ্গত, ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী তৃতীয় ধাপে ৮৭ উপজেলায় ২৯ মে এবং চতুর্থ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ৫ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আর প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে ৮ মে এবং দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬ উপজেলায় ভোট সম্পন্ন হয় ২১ মে।