‘মিথ্যা আশ্বাস আর নয়, এবার টেকসই বাঁধ চাই/আর চাই না ভাসতে, এবার দিন বাঁচতে/উপকূলের কান্না, শুনতে কি পান না?’- এমন বিভিন্ন স্লোগান তুলে মানববন্ধন করেছে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলের সহস্রাধিক মানুষ।
ঘূর্ণিঝড় রিমালসহ বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে মঙ্গলবার বিকেলে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পাতাখালী পয়েন্টে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধের ওপর এ মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনটিতে স্থানীয় বাসিন্দা মাওলানা আব্দুল মাজেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- আবু তাহের, মোক্তার হোসেন, তরিকুল, স ম ওসমান গণি সোহাগ, মাসুম বিল্লাহ, নিশাত, রায়হান প্রমূখ।
এসময় বক্তারা বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমাল শুধু নয়, প্রতিবারই এমন পরিস্থিতিতে কর্তাব্যক্তিরা শুধু আশ্বাসের বুলি আওড়ান; শোনান নানা ধরনের মেগা প্রকল্পের গল্প। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের এই অঞ্চলে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়নি। উপকূলের মানুষকে বাঁচাতে টেকসই বেড়িবাঁধের বিকল্প নেই।
তারা বলেন, টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে ব্যর্থ হলে সাতক্ষীরা উপকূলীয় অঞ্চলকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে স্থানীয়দের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিন। আমরা বারবার নয়, একবারই মরতে চাই।
বক্তারা জানান, ষাটের দশকে নির্মাণ করা বেড়িবাঁধটি প্রায় অর্ধশত বছর ধরে জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে। এ কারণে সামান্য ঝড় বা জলোচ্ছ্বাসের কথা শুনলেই আঁতকে ওঠে উপকূলের মানুষ। তারা ঝড়কে ভয় পায় না, ভয় পায় বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হওয়াকে।
উপকূলীয় এলাকায় স্থায়ী বেড়িবাঁধ না থাকার কারণে ২০০৯ সালে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় আইলায় এই এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয় উল্লেখ করে তারা বলেন, কয়েক বছর সাগরের নোনা পানিতে বন্দী থাকতে হয় হাজার হাজার পরিবারকে। এসময় টিকতে না পেরে শত শত মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে অন্য এলাকায় চলে গেছে।
আইলার সময়ই উপকূলীয় এলাকার ভঙ্গুর বাঁধ টেকসই করার বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়। অথচ পার্শ্ববর্তী গাবুরায় মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও ক্ষতিগ্রস্ত এই এলাকায় এক যুগেও তা আর হয়নি। এ কারণে সামান্য জোয়ারের পানিতেই বাঁধ ভেঙে এই এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
বক্তাদের অভিযোগ, উপকূলের মানুষকে জিম্মি করে বাঁধ ভাঙার আশায় থাকেন এক শ্রেণির অসাধু জনপ্রতিনিধি ও ঠিকাদার। বাঁধ মেরামতের নামে তারা লাখ লাখ টাকা লোপাট করেন।
তাই উপকূলীয় এলাকার মানুষকে বাঁচাতে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণে এলাকাবাসীর পক্ষে দাবি উপস্থাপন করেন তারা।