দেশের উপকূলে তাণ্ডব চালিয়ে ঘূর্ণিঝড় রিমেল স্থলভাগে নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পর এখন সিলেটে তাণ্ডব চালাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সোমবার সকাল থেকে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া শুরু হয় সিলেটে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিলো।
ঝড়ের প্রভাবে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের সরবরাহ লাইন ও খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে সিলেট নগরসহ পুরো বিভাগজুড়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় সাড়ে তিন লাখ গ্রাহক সোমবার রাত থেকে বিদ্যুৎহীন।
মঙ্গলবার দুপুরের দিকে ঝড়-বৃষ্টি থামার পর বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
এদিকে বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কও ব্যাহত হচ্ছে। নেটওয়ার্ক না থাকায় জরুরি প্রয়োজনেও মোবাইলেও কল করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন অনেক গ্রাহক।
টানা বর্ষণে সিলেট নগরের স্থানে স্থানে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা। ছবি: নিউজবাংলা
মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় সিলেটে ৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। এর আগে সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় এখানে ২৪৯ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। প্রবল বৃষ্টির কারণে নগরের অনেক স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে গাছ উপড়ে পড়ারও খবর পাওয়া গেছে। সে হিসাবে রিমালের প্রভাবে সিলেটে মোট ২৯৬ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে সিলেট সিটি করপোরেশনের ৪০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে ছেলের জন্মনিবন্ধন করাতে গিয়েছিলেন কবির আহমদ। কিস্তু বিদ্যুৎ না থাকায় দুপুর পর্যন্ত বসেও জন্ম নিবন্ধন করাতে পারেননি তিনি।
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সচিব রুবেল আহমদ বলেন, ‘সোমবার রাত থেকেই বিদ্যুৎ নেই। কোনো কাজ করা যাচ্ছে না। আজ অনেক সেবাগ্রহীতা এসে ফিরে গেছেন।’
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল কাদির বলেন, ‘বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে সিলেট বিভাগে গ্রাহক আছেন প্রায় সাড়ে ৭ লাখ। এর মধ্যে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ গ্রাহক।
‘ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে হওয়া ঝড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের তার ও খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেগুলো মেরামতের চেষ্টা চলছে।’
তিনি জানান, মঙ্গলবার সিলেট বিভাগে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের গ্রাহকদের চাহিদা ছিল ১৯৫ মেগাওয়াট। এর মধ্যে বিদ্যুতের সরবরাহ ছিল মাত্র ৭৫ মেগাওয়াট।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমাল স্থল নিম্নচাপে রূপ নেয়ার পর সেটি মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সিলেটে অবস্থান করছিল। এ কারণে বৃষ্টিপাত ও ঝড়ের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছিল। তবে দুপুরের পর থেকে বৃষ্টি কমেছে।’
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ঝড়ো হাওয়া ও প্রবল বর্ষণের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে সিলেটের জনজীবন। মঙ্গলবার সকাল থেকে নগরীর সড়কগুলোতে যানবাহনের সংকট দেখা দেয়। এ সময়কালে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হননি মানুষজন। তবে চাকরিজীবীদের ভোগান্তি মাথায় নিয়েই নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে স্কুল-কলেজ খোলা থাকলেও ঝড়-বৃষ্টির কারণে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল খুবই কম। তবে পরীক্ষা থাকায় অনেক শিক্ষার্থীকে প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও বিদ্যালয়ে যেতে দেখা গেছে।