বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

উপকূলজুড়ে ঘূর্ণিঝড় রিমালের ক্ষত

  •    
  • ২৭ মে, ২০২৪ ১২:৫৪

খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন জানান, ঝড় পরবর্তী ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলায় পাঁচ হাজার ২৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ উপকূল অতিক্রম করলেও রেখে গেছে ক্ষত।

ঘূর্ণিঝড়টি রোববার রাতে উপকূলে আঘাত হানে। রাত আটটার দিকে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করে।

এ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ উপকূলের বিভিন্ন জেলায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়। ঝড়ের সময় বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার।

ঝড়ের প্রভাবে বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। ফলে উপকূলীয় এলাকায় অসংখ্য বাড়িঘর ভেঙে পড়ে, প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম।

রিমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে খুলনার কয়রা উপজেলার তিনটি জায়গার বাঁধ ভেঙে অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে ভেসে যয় শতাধিক চিংড়ির ঘের, কয়েক শ কাঁচা ঘরবাড়ি ও দোকানপাট।

এ ছাড়া রাতভর ভারি বৃষ্টি ও ঝড়ের তাণ্ডবে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়। পাইকগাছা উপজেলার পাঁচ পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, রোববার রাতে জোয়ারের তীব্র চাপে মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের সিংহেরকোণা, মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া ও দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বেলাল গাজীর বাড়ির সামনের বাঁধ ভেঙে যায়।

স্থানীয়রা জানান, বাঁধের দুর্বল অংশের ওই তিনটি স্থানে প্রায় ১৫০ মিটার ভেঙে নদীর নোনা পানিতে প্লাবিত হয় এলাকা।

এ ছাড়া বাঁধের নিচু কয়েকটি জায়গা ছাপিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। এসব জায়গায় এলাকার মানুষ রাতভর মেরামত কাজ চালিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারেনি।

মহারাজপুরের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, ‘জোয়ারের চাপে ইউনিয়নের দশহালিয়া এলাকায় প্রায় ৫০ মিটার বাঁধ ভেঙে কপোতাক্ষ নদের পানি ঢুকে পড়ে। এতে অন্তত দুটি গ্রাম ও কয়েক শ চিংড়ির ঘের তলিয়ে যায়।

‘ঝড়ের প্রভাবে অনেক বাড়িঘর পড়ে যায়। তার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে আমি নিজ উদ্যোগে যাকে যা পারছি, সহায়তা করছি।’

মহেশ্বরীপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারি বলেন, ‘ইউনিয়নের সিংহেরকোণা এলাকায় বাঁধ ভেঙে গেছে। এ ছাড়া নয়ানি এলাকার বাঁধের নিচু জায়গা ছাপিয়ে সারা রাত পানি ঢুকেছে। এতে অন্তত সাতটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে।

‘এ ছাড়া অসংখ্য চিংড়ির ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ঝড়ের তাণ্ডব ও ভারি বৃষ্টিতে কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে শতাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আছের আলী জানান, তার ইউনিয়নের মাটিয়াভাঙ্গা এলাকায় রাতের জোয়ারে বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে যায়। এতে পাঁচ থেকে সাতটি গ্রামে নদীর পানি ঢুকে পড়ে। এ ছাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় নিচু বাঁধ ছাপিয়ে পানি প্রবেশ করে এলাকায়।

একইভাবে খুলনার দাকোপ উপজেলায় পাউবোর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকছিল। রোববার রাত দেড়টার দিকে উপজেলার শিবসা ও ঢাকী নদীর বাঁধ ভেঙে তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের কামিনীবাসিয়া গ্রামের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা তলিয়ে যায়।

তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ক্ষিতীশ গোলদার বলেন, একই এলাকায় পাঁচটি পয়েন্ট ভেঙে এখন পানি ঢুকছে। কামিনীবাসিয়া গ্রামের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় পুরোটা নোনা পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, ‘এত উঁচু জোয়ার আগে দেখিনি। ঢাকি ও শিবসা নদীর মোহনায় কামিনীবাসিয়া পুরাতন পুলিশ ক্যাম্প–সংলগ্ন ওই এলাকায় বেড়িবাঁধের অংশ খুব বেশি দুর্বল ছিল না, তবে বেশ কিছুটা নিচু হওয়ায় উচ্চ জোয়ারের চাপে পানি বেড়িবাঁধ ছাপিয়ে ভেতরে ঢোকে। এরপর বেড়িবাঁধের পাঁচটি পয়েন্ট ভেঙে যায়।’

পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী লিয়াকত আলী জানান, ঘূর্ণিঝড়ের সতর্ক সংকেত পাওয়ার পর থেকে স্থানীয় মানুষ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করা হয়েছে। টানা বৃষ্টি ও নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি বেড়ে যাওয়ায় কয়েকটি স্থানে বাঁধ সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সোমবার দুপুরের জোয়ারের আগে তা মেরামতের চেষ্টা চলছে।

খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন জানান, ঝড় পরবর্তী ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলায় পাঁচ হাজার ২৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে।

এ বিভাগের আরো খবর