মারধর করে প্রায় দুই লাখ টাকা ডাকাতির মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দুই শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে শাহবাগ থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৩ মে) তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে শুক্রবার তাদের আদালতে তোলা হলে জামিন পেয়েছেন তারা।
গত ২১ এপ্রিল মো. রুবেল নামের এক ব্যবসায়ী তিনজনের নাম উল্লেখ করে আরও ৫/৬ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে শাহবাগ থানায় মামলা করেন। অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে এই দুই শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- নিশান, রাসেল মিয়া ও রাফি। তাদের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাজিব শেখ বলেন, ‘দস্যুতার মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষার্থী নাফিজ ফুয়াদ এবং মাহিদুর রহমান বাঁধনকে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তার করে পরদিন আদালতে পাঠানো হয়। বর্তমানে তারা জামিনে আছেন।’
এই মামলায় সর্বমোট কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে- জানতে চাইলে রাজিব শেখ বলেন, ‘মোট কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেটি আমি বলতে পারব না। কারণ এটি তদন্তাধীন মামলা।’
নাফিজ ফুয়াদ ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। মাহিদুর রহমান বাঁধন নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ফজলুল হক মুসলিম হল ছাত্রলীগের পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক।
এদের মধ্যে নাফিজ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবীর শয়নের আর বাঁধন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী বলে ক্যাম্পাসে পরিচিত।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি শয়ন বলেন, ‘বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণে রেখেছি। আদালতের রায়ে যদি তারা দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’
মামলার এজাহারে ভুক্তভোগী মো. রুবেল লেখেন, ‘আমি গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকায় এক নম্বর আসামি নিশানের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। গত ১৫ এপ্রিল নিশান আমাকে দরকারি কথা আছে বলে শাহবাগ থানাধীন সুপার হোস্টেলে আসতে বলায় আমি সেখানে যাই। সেখানে তার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলার পর খাবার খাওয়াবে বলে সে আমাকে নিচে নামালে রাসেল, রাফিসহ অজ্ঞাতনামা আসামিরা তিনটি মোটরসাইকেলে করে আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের নির্জন জায়গায় নিয়ে যায়। ঈদের বন্ধ থাকার কারণে সেখানে খুব কম লোকের আনাগোনা ছিল।
‘তখন নিশান বাকী আসামিদের বলে, আমার কাছে অনেক টাকা আছে, ব্যাংক ব্যালেন্সও অনেক আছে। এরপর আমাকে মোবাইলের লক খুলতে বলা হলে আমি অস্বীকৃতি জানালে অজ্ঞাতনামা আসামিরা আমাকে খেলার মাঠে ফেলে লাথি, কিল-ঘুষি মারতে থাকে। প্রচণ্ড মারধরের কারণে আমি মোবাইলের খুলে দেই।
‘এরপর তারা আমার মোবাইলের সিটি ব্যাংকের অ্যাপ থেকে আমার বিকাশ অ্যাকাউন্টে পঞ্চাশ হাজার টাকা সেন্ডমানি করে সেখান থেকে তাদের বিকাশ অ্যাকাউন্টে নিয়ে নেয়। পরে আমার নগদ অ্যাকাউন্ট থেকে ৪৯ হাজার ৯৩৫ টাকা, রকেট অ্যাকাউন্ট থেকে ২০ হাজার ৬০০ টাকা এবং এটিএম কার্ডের পিন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাচ বাংলা ব্যাংকের বুথ থেকে আরও ৫০ হাজার টাকা আসামিরা নিয়ে নেয়।’
এজাহারে ভুক্তভোগী রুবেল বলেন, ‘আসামিরা আামার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নিয়ে খালি স্ট্যাম্পে আমার স্বাক্ষর নেয়। এরপর রাত সাড়ে আটটায় আমার মানিব্যাগ থেকে আরও ৫ হাজার টাকা নিয়ে আমার এটিএম কার্ড, মোবাইল ফেরত দিয়ে আমাকে মাঠ থেকে বের করে দেয়া হয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘দুই শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারের খবর পেয়েছি। থানা থেকে এখনও আমরা মামলার কাগজপত্র পাইনি। পেলে আমরা বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’