ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে এর আগেও দু’বার হত্যার চেষ্টা করা হয়। তৃতীয় বারের চেষ্টায় ঘাতকরা হত্যাকাণ্ড ঘটাতে সক্ষম হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ শনিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
ডিএমপি ডিবি প্রধান জানান, ৬ জাতীয় নির্বাচনের আগে এবং পরবর্তীতে ওই মাসেই এমপি আনারকে খুনের পরিকল্পনা করেছিলেন হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীন ও আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া। কিন্তু তাদের পাতা ফাঁদে পা না দেয়ায় দু’বারই বেঁচে যান আনার।
তিনি জানান, খুনিদের পরিকল্পনা ছিল হত্যার আগে সংসদ সদস্য আনোয়ারুলকে জিম্মি করে ব্ল্যাকমেইল করা। তার আপত্তিকর ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল করে হুন্ডির মাধ্যমে এবং কলকাতায় থাকা তার বন্ধুদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
আনার কলকাতার ভাড়া করা ওই ফ্ল্যাটে যাওয়ার পর তার মুখে চেতনানাশক ব্যবহার করায় তিনি জ্ঞান হারান। অজ্ঞান অবস্থায় আনারের আপত্তিকর ছবি তোলা হয়। হত্যাকারীদের মূল টার্গেট ছিল আনারকে হত্যা করা। আর শেষ পর্যন্ত তারা সেটা করেছে।
হারুন বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের মদতদাতা আক্তারুজ্জামান শাহিন ৩০ এপ্রিল কলকাতায় তিনজনকে নিয়ে যান। সেই দলে একজন নারীও ছিলেন। কিলিং মিশন বাস্তবায়নে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভুঁইয়াকে বুঝিয়ে দিয়ে শাহিন ১০ মে পর্যন্ত কলকাতায় অবস্থান করে দেশে ফেরেন।
‘গ্রেপ্তার আসামিদের কাছ থেকে আমরা বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছি। ভারতীয় পুলিশ আমাদের এখানে কাজ করছে। তাদের কাজ শেষ হলে আমরাও কলকাতায় চলে যাব।’
কী কারণে এমপি আনারকে হত্যা করা হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই হত্যার পেছনে অনেক কারণই থাকতে পারে। কী কারণে হত্যা করা হয়েছে, সেটি এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হত্যার মূল কারণ তদন্ত শেষে বলা যাবে।’
অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, আগেও সংসদ সদস্য আনোয়ারুলকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। সবশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তাকে একবার হত্যার চেষ্টা করা হয়। তখন তারা ব্যর্থ হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ১৭ থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত সংসদ সদস্য আনোয়ারুল কলকাতায় যান। সে সময় খুনিরাও তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কলকাতায় যায়। কিন্তু হোটেলে থাকার কারণে সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। তৃতীয় দফায় তারা সফল হয়েছে।’
ডিবি প্রধান বলেন, সংসদ সদস্য আনার হত্যার ঘটনা তদন্তে ভারতীয় পুলিশের একটি দল ঢাকায় কাজ করছে। পাশাপাশি আমাদের হাতে গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রযুক্তিগত তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা দুটি বিষয় পেয়েছি। দুটি গ্রুপ এখানে কাজ করেছে। একটি গ্রুপ মদদ দিয়েছে, আরেকটি গ্রুপ হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নে কাজ করেছে।
এই হত্যার সঙ্গে স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের কোনো সম্পৃক্ততা আছে কি না জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান বলেন, ‘নির্দিষ্ট করে কোনো কিছুই বলা যাবে না। তবে অনেক বিষয় আছে। তদন্ত শেষ করে আমরা জানাতে পারব।’