জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নতুন ক্যাম্পাসের কাজ শুরুর আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
রাজধানীর বঙ্গবাজার প্রাঙ্গণে শনিবার ‘বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণি বিতান’, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মণি সরণি’, ‘নজরুল সরোবর’ ও ‘হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশুপার্ক আধুনিকীকরণ’ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জগন্নাথ একটা স্কুল ছিল। প্রাইমারি স্কুল, প্রাইমারি থেকে উচ্চ মাধ্যমিক হয়। তারপর কলেজ হয়, এখন বিশ্ববিদ্যালয়। এতটুকু জায়গা, বিভিন্ন জায়গায় ছড়ানো-ছিটানো হোস্টেল। সেজন্য সবকিছু এক জায়গায় করে, একটা ভালো ক্যাম্পাস এবং শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য আধুনিক সব সুবিধাসম্পন্ন আবাসস্থল, শিক্ষার জন্য আধুনিক, সুন্দর, প্রযুক্তি দিয়ে একটা ক্যাম্পাস তৈরি করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে জায়গা দেয়া হয়েছে, ডিজাইনও করা হয়েছে। সেই কাজও আমরা খুব তাড়াতাড়ি শুরু করব। নতুন ক্যাম্পাস আমরা করে দেব। ছেলেমেয়েরা যাতে সুস্থ পরিবেশে লেখাপড়া করতে পারে সেদিকে নজর রেখে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
উপাচার্য যা বললেন
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ভিডিওটি সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরার পর ব্যাপক সাড়া পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা ভিডিওটি শেয়ার করে কেউ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। আবার কেউ কেউ দীর্ঘদিনেও কাজের আশানরূপ অগ্রগতি না হওয়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন।
প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মোবাইল ফোনে তিনি বলেন, ‘আমরা খুবই আশান্বিত হয়েছি যে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। তার স্বদিচ্ছার জন্য ২০১৮ সালে কেরানীগঞ্জে জমি বরাদ্দ করা হয়।
‘আমি দায়িত্ব নেয়ার পর প্রয়াত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক যে টেন্ডারগুলো সব প্রক্রিয়া শেষ করে পাস করে গেছেন, শুধু সেগুলোর ওয়ার্ক অর্ডার করেছি। তদারকি কমিটি ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে এখানে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। প্রকৌশলীদের সঙ্গে মিটিং করেছি। তারাও স্বীকার করেছেন যে তাদের কাজে গাফিলতি আছে। আমাদের অভ্যন্তরে যারা কাজ করছেন, তারা নতুন ক্যাম্পাস বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছার প্রতি সম্মান দেখাতে পারেননি। তাদের সক্ষমতারও ঘাটতি আছে বলে মনে হচ্ছে।’
উপাচার্য বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান যে কাঠামো তাতে এত বড় প্রকল্প চালানোও অসম্ভব। কারণ আমাদের সে ধরনের দক্ষ বা বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার নেই। ডিপিপিতে উল্লেখ করা ছিলো যে জনবল দেয়া হবে, ইঞ্জিনিয়ার দেয়া হবে, মনিটরিং টিম দেয়া হবে। কিন্তু কোনো কারণবশত ডিপিপি থেকে সেগুলো বাদ দেয়া হয়।
‘সরকারের প্রতি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিরি প্রতি আপিল করছি- তারা যেন ডিপিপি রিভাইজ করে দক্ষ জনবল, মনিটরিং টিম ও অন্যান্য দরকারি উপাদানের ব্যবস্থা করেন। তাহলে আমরা কাজটি দ্রুত এগিয়ে নিতে পারব।’
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে আবাসিক হলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মাসব্যাপী আন্দোলনের মুখে কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের সিদ্ধান্ত জানায় সরকার।
একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, আবাসন ব্যবস্থা, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, ক্যাফেটেরিয়া, খেলার মাঠ, চিকিৎসাকেন্দ্র, সুইমিংপুল, লেক নির্মাণসহ উন্নতমানের ক্যাম্পাস তৈরির মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে তেঘরিয়ার পশ্চিমদি মৌজায় ২০০ একর ভূমি অধিগ্রহণের অনুমোদন দেয়া হয়।
২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর জমির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়। ৯ অক্টোবর নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনে ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নের জন্য প্রকল্প অনুমোদন করে একনেক। এক হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের অক্টোবরের মধ্যে।
২০১৯ সালের জুলাইয়ে নতুন ক্যাম্পাসের নকশাও দেখানো হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। ওই বছরের জুলাইয়ে প্রায় ৯০০ কোটি টাকার চেক পায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসের সীমানা প্রাচীর ও লেকের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।