ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার আর দশজন জনপ্রতিনিধির মতোই জনসম্পৃক্ত বিভিন্ন কাজে নিজেকে জড়িত রেখে এসেছেন। তবে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে তার একটি বিশেষ গুণ ছিল। কারও মৃত্যুর খবর শুনলেই ছুটে যেতেন সেখানে। সান্ত্বনা দিতেন স্বজনদের। অংশ নিতেন নামাজে জানাজায়।
চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে নৃশংস হত্যার শিকার হয়েছেন এমপি আনার। পুলিশের দেয়া তথ্যমতে, হত্যার পর দেহ টুকরো টুকরো করে হত্যাকাণ্ড ঘটানো কলকাতার সেই ফ্ল্যাট থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) শাখার প্রধানের বক্তব্য অনুযায়ী তার মরদেহের খোঁজ পাওয়াটা অনিশ্চিত।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কালীগঞ্জের মানুষের মনে প্রশ্ন- তাহলে জনপ্রতিনিধি আনোয়ারুল আজীম আনারের জানাজা নামাজের কী হবে? যে মানুষটি স্বপ্রণোদিত হয়ে হাজার হাজার মানুষের জানাযায় অংশ নিয়েছেন, তার কফিন সামনে রেখে কি জানাজা হবে না?
তারা বলছেন, সকাল, সন্ধ্যা কি রাত। যখনই কারও মৃত্যুর খবর পেতেন গিয়ে হাজির হতেন সেখানে এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার। শরিক হতেন জানাজা নামাজে। সেই মানুষটি হত্যার শিকার হয়েছেন জানতে পারছি। কিন্তু মরদেহ না পেলে? সেক্ষেত্রে মানুষটির জন্য কেবলই গায়েবানা জানাজা পড়তে হবে?
জানা যায়, ২০০৯ সালে কালীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই আনোয়ারুল আজিম আনার মানুষের মৃত্যুর খবর পেলে তার বাড়িতে ছুটে যেতেন। সকাল কিংবা রাত। শীত বা গরমের পরোয়া করতেন না। এমনকি একই সময়ে দুই স্থানে দুজনের জানাজার আয়োজন হলে ফোন করে অপেক্ষা করতে বলতেন। তবুও জানাজায় অংশ নিতেন তিনি। সেই মানুষটির জানাজার কী হবে তা নিয়ে এখনও সংশয়ে আছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের মানুষ।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী জাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের প্রিয় নেতা আনার হাজার হাজার মানুষের জানাজায় অংশ নিয়েছেন। যত গুরুত্বপূর্ণ কাজই থাকুক না কেন তা ফেলে তিনি জানাজায় অংশ নিয়েছেন। সেই মানুষটির জানাজা কি হবে না? তার মরদেহ কি খুঁজে পাওয়া যাবে না?’
রাশেদুল নামের এক কর্মী বলেন, ‘হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি এমপি আনারের মরদেহ উদ্ধারের দাবি জানাচ্ছি। তার মরদেহ টুকরো টুকরো করে ফেলে রাখা হয়েছে কোথায় তা খুঁজে বের করতে হবে।’
কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ বলেন, ‘এমপি আনার কলকাতায় গিয়ে নিখোঁজের পর তাকে হত্যা করা হলেও এখনও মরদেহ উদ্ধার হয়নি। পুলিশ বলছে যে এমপি আনারকে হত্যা করে লাশ টুকরো করে তিনটি ট্রলিতে করে নিয়ে যায় হত্যাকারীরা।
‘হত্যার ঘটনা জানার একদিন পেরিয়ে গেলেও এখনও সেই লাশ উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। আমরা আমাদের প্রিয় নেতার মরদেহ ফেরত চাই। একটু অংশ হলেও আমরা তার লাশ চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অন্তত ১৪ হাজার মানুষের জানাজা নামাজে অংশ নিয়েছেন এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার। আমরা তার কফিন সামনে রেখে জানাজা নামাজ পড়তে চাই।’