ময়মনসিংহের ত্রিশালে মা ও দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় করা মামলায় ওই নারীর স্বামী আলী হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বুধবার রাতে গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেন গাজীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মো. শামীম হোসেন। পরে অভিযুক্তকে ১৬৪ ধরায় জবানবন্দীর জন্য আদালতে সোপর্দ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, আলী হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দেন তিনি।
আলীর কোনো জমিজমা ছিল না। তিনি ছিলেন দিনমজুর। অভাবের সংসারে ২৫ বছর বয়সী স্ত্রী আমেনা খাতুন ও দুই ছেলে ছিল তার। চার বছর বয়সী বড় ছেলের নাম আবু বক্কর সিদ্দিক ও আড়াই বছর বয়সী ছোট ছেলে আনাছ।
আলী তার চাচার দেয়া জমিতে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছেন। সংসারে সারা বছর অভাব-অনটন লেগেই থাকত। ঠিকমতো সংসার চালাতে পারতেন না। তাই বিভিন্ন সময় স্ত্রী আমেনার নামে এনজিও থেকে ঋণ নিতেন তিনি।
সম্প্রতি আলী এক এনজিও থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ঋণ নেন আলী। সেই টাকার কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় তাকে ও তার স্ত্রীকে অপমান করতেন এনজিওকর্মীরা। প্রায়ই আলীর স্ত্রী ও দুই ছেলে না খেয়ে দিন কাটাত। ঋণের বোঝা, মানুষের অপমান, সংসারের অভাব-অনটন- এসব কিছু থেকে মুক্তি পেতে ২-৩ মাস আগে স্ত্রী ও সন্তানদের হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন আলী।
পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৬ মে রাতে ঘুমন্ত স্ত্রীকে ডেকে তোলেন এবং গলায় ওড়না পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করেন। এরপর একইভাবে দুই সন্তানকেও হত্যা করেন তিনি। পরে স্ত্রী-সন্তানের মরদেহ বাড়ির পাশের জমিতে পুঁতে রেখে বাড়ি ফিরে ঘুমিয়ে পড়েন। পরেরদিন সকালেই জিনিসপত্র গুছিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করেন। পরে প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ শ্রীপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
এর আগে, ২১ মে দুপুরে ত্রিশাল থানার রামপুর ইউনিয়নের কাকচর নয়াপাড়া গ্রামের কৃষিজমি থেকে তিনটি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর থানা পুলিশের পাশাপাশি পিবিআই, সিআইডিও প্রযুক্তির সহায়তায় মরদেহের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করে, কিন্তু মরদেহগুলো অর্ধগলিত হওয়ায় এবং শিশু দুটির দেহ মাথাবিহীন হওয়ায় পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। পরে মরদেহের সঙ্গের কাপড় দেখে পরিচয় শনাক্ত করেন নিহত আমেনার মা। এ ঘটনায় নিহত আমেনা খাতুনের মা হাসিনা খাতুন বাদী হয়ে বুধবার আলী হোসনসহ অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মো. শামীম হোসেন বলেন, ‘২০১২ সালে আলী হোসেনের বিরুদ্ধে ত্রিশাল থানায় ধর্ষণ ও শ্বাসরোধ করে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়। ওই মামলায় ৫ বছর কারাভোগ করে ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে জামিন পান তিনি। মামলাটি বিচারাধীন। ওই মামলায় জামিনে বের হয় ফুফাতো বোনকে বিয়ে করেছিলেন আলী হোসেন।’