বীর বাহাদুর রায় তার জীবনের দীর্ঘ ৪০টি বছর কাটিয়ে দিয়েছেন এই বাংলাদেশে। অবশেষে তিনি ফিরে গেলেন নিজ দেশ নেপালে।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় বৃহস্পতিবার (২৩ মে) বিকেল ৪টার দিকে বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ভারত হয়ে দেশের পথে রওনা হয়ে গেছেন এই নেপালি নাগরিক।
বীর বাহাদুরের বাড়ি নেপালের গোরখে বাঙ্গিনা এলাকায়। তিনি ওই এলাকার মৃত অধীর চন্দ্রের ছেলে বলে জানা যায়।
বীর বাহাদুরকে বৃহস্পতিবার বাংলাবান্ধায় স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি, নেপাল দূতাবাসের উপ-রাষ্ট্রদূত ললিতা সিলওয়াল, দ্বিতীয় সচিব ইয়োজানা বামজান ও সেক্রেটারি অফ অ্যাম্বাসেডর রিয়া ছেত্রী, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুবুল হাসান, বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের এসআই ও ইনচার্জ অমৃত অধিকারীসহ পুলিশ ও বিজিবি সদস্যবৃন্দ।
বীর বাহাদুরকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের সময় এক আবেগঘন দৃশ্যের অবতারণা হয়। বাংলাদেশে থাকার সময় যারা দীর্ঘ ৪০ বছর পরম যত্নে রেখেছিলেন তাদেরকে স্মরণ করেন তিনি। একইসঙ্গে স্বজনদের ফিরে পাওয়ার আনন্দে চোখের পানি ফেলেন। এই বৃদ্ধ। একইসঙ্গে স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ায় বাংলাদেশের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এই নেপালি।
জানা যায়, প্রায় ৪০ বছর আগে ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন বীর বাহাদুর রায়। দীর্ঘ এই সময়ে তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্টে কাজ করেন। প্রায় ৩০ বছর ধরে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া এলাকার অলক বসাকের চাতালে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন তিনি।
বাংলাদেশে অবস্থানকালে বীর বাহাদুর রায়ের বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা বিরূপ কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এসব দিক বিবেচনা করে ১৬ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে নেপালি নাগরিক বীর বাহাদুর রায়কে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের অনুমতি দেয়া হয়। সে অনুযায়ী আইনি জটিলতা নিরসন শেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে তাকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বীর বাহাদুরের ভাতিজা রাজন রায় বলেন, ‘আমরা খুব কৃতজ্ঞ বাংলাদেশের মানুষ ও প্রশাসনের প্রতি। তারা আমার চাচাকে পরম যত্নে রেখেছিলেন। এজন্য তেঁতুলিয়া প্রশাসনকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি বলেন, ‘বীর বাহাদুর রায় একজন নেপালি নাগরিক। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গাসহ বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় একজনের আশ্রয়ে ছিলেন। তার এই অবস্থানকালে কোনো ধরনের মামলা কিংবা তার ব্যাপারে বিরূপ কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তাই তাকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের অনুমতি দেয় প্রশাসন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ (বৃহস্পতিবার) বিকেলে উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় বীর বাহাদুর রায়কে তার স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’