সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ বলেছেন, সরকারকে বিব্রত ও হেয় করার জন্য তার ও তার পরিবারের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।
মঙ্গলবার ঢাকায় একটি টিভি চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে এছাড়াও তিনি অন্যান্য গণমাধ্যমকর্মীর সঙ্গে কথা বলেন।
সেনাপ্রধান হিসেবে এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ভাই বা আত্মীয়দের কন্ট্রাক্ট দিয়েছেন- কেউ এটা প্রমাণ করতে পারলে যে কোনো কনসিকোয়েন্স মেনে নিতে প্রস্তুত বলে সাংবাদিকদের জানান আজিজ আহমেদ।
নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে জানতে চাইলে জেনারেল আজিজ বলেন, ‘আমি অবাক হয়েছি। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো অবান্তর। আর আমার বিরুদ্ধে নেয়া এই ব্যবস্থাও অন্যায়।’
তিনি বলেন, ‘আমাকে নিয়ে তৈরি আল জাজিরার ডকুমেন্টারিটি বানোয়াট। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি আল জাজিরায় ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস ম্যান’ নামক একটি নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল। যদিও এখানে অতকিছু বিস্তারিত বলা হয়নি, কিন্তু একই জিনিস। তার সঙ্গে এই নিষেধাজ্ঞা ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত।’
আজিজ দৃঢ়ভাবে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার ভাইদের জন্য তদবির করার যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটির সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকার সব প্রমাণ আমার কাছে আছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি বিজিবির মহাপরিচালক এবং সেনাপ্রধান থাকাকালীন আমার কোনো ভাই বা নিকটাত্মীয় এই দুই প্রতিষ্ঠানের কোথাও ঠিকাদারি করেছে তার তথ্য-প্রমাণ দিতে পারলে আমি সব মেনে নেব। শুধু তাই নয়, এই প্রতিষ্ঠান দুটিতে তাদের কোনো লাইসেন্স ছিল সেটার প্রমাণ দিতে পারলেও আমি সব শাস্তি মেনে নেব।’
আজিজ বলেন, ‘প্রথম অভিযোগ হলো, আমি আমার ভাইকে বাংলাদেশের প্রচলিত যে আইন আছে, তার অপরাধ কর্মকাণ্ড থেকে সে যাতে এড়িয়ে চলতে পারে সে জন্য আমি আমার পদ-পদবি ব্যবহার করে তাকে সহযোগিতা করে দুর্নীতি করেছি। দ্বিতীয়টি হলো, আমি সেনাপ্রধান হিসেবে আমার ভাইকে সামরিক কন্ট্রাক্ট দিয়ে ঘুষ নিয়েছি; আমি আরেকটি দুর্নীতি করেছি।’
তিনি বলেন, ‘প্রথম অভিযোগের বিষয়ে বলবো, আমার সেই ভাই, যদিও এখানে নাম উল্লেখ করা হয়নি, আমি জেনারেল হওয়ার অনেক আগে থেকে বিদেশে এবং নিশ্চয়ই সে বৈধ পাসপোর্ট নিয়েই বিদেশে গিয়েছে। সেখানে দেশ থেকে চলে যাওয়ার বা দেশের প্রচলিত আইন ফাঁকি দেয়ার ক্ষেত্রে আমি আমার পদ-পদবি ব্যবহার করেছি এই অভিযোগ আমি মেনে নিচ্ছি না। মেনে নিতে পারি না, এটা সঠিক না।
‘দ্বিতীয় অভিযোগের ক্ষেত্রে বলবো, আমি চার বছর বিজিবি প্রধান এবং তিন বছর সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে কেউ যদি একটা প্রমাণ দিতে পারে যে আমি আমার ভাই বা আত্মীয়কে বিজিবি বা সেনাবাহিনীতে কোনো কন্ট্রাক্ট দিয়েছি, আমি যে কোনো কনসিকোয়েন্স মেনে নিতে প্রস্তুত আছি। আমি আমার কোনো আত্মীয়-স্বজন, ভাইকে কোনো কন্ট্রাক্ট দেইনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ভাইদের কারও বিজিবি বা সেনাবাহিনীতে ঠিকাদারি করার জন্য, কন্ট্রাক্ট নেয়ার জন্য কোনো ধরনের লাইসেন্স আছে কি না খোঁজ নিলেই পেয়ে যাবেন।’
যুক্তরাষ্ট্রকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাবেন কি না- গণমাধ্যমকর্মীদের এমন প্রশ্নে আজিজ আহমেদ বলেন, ‘আমার জানানোর কোনো প্রয়োজন নেই।’
যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন কি না জানতে চাইলে আজিজ বলেন, ‘আমি দুটি প্রশ্নের জবাব দিয়েছি। আমার মনে হয় আর কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করার কিছু নেই।’
তিনি বলেন, ‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমি নিশ্চিত, এটা লোকজন বুঝবে।’