ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬ উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল মঙ্গলবার। এর মধ্যে ২৪ টি উপজেলায় ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। বাকিগুলোতে সরাসরি ব্যালটে ভোট নেয়া হবে। সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
এই নির্বাচনে প্রতিনিধি বাছাইয়ে মত দেবেন তিন কোটি ৫২ লাখের বেশি ভোটার। ইতোমধ্যে ভোট উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
দ্বিতীয় ধাপে ১৫৭ উপজেলায় ভোটগ্রহণের কথা থাকলেও রোববার রাতে আদালতের নির্দেশে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফলে এই ধাপে ১৫৬ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে।
নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
দুর্গম ও উপকূলীয় অঞ্চল বিবেচনায় ৩০টি উপজেলার ৬৮৫ কেন্দ্রে সোমবারই ব্যালট পাঠানো হয়েছে। বাকি ১২ হাজার ৩৩১টি কেন্দ্রে ব্যালট পৌঁছবে আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে। মোট ১৩ হাজার ১৬টি কেন্দ্রে ভোট কক্ষ থাকবে ৯১ হাজার ৫৮৯টি।
সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছে পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য। সমতলে সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১৭ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে মোতায়েন থাকবে ১৯ জনের ফোর্স। দুর্গম ও পার্বত্য এলাকায় এই সংখ্যা আরও বেশি।
এছাড়া নির্বাচনি আচরণবিধি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতি ইউনিয়নে থাকবেন একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
ইসি সূত্র জানায়, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত। সোমবার থেকেই সংশ্লিষ্ট প্রতিটি উপজেলায় একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। ভোটের আগে-পরে মোট পাঁচদিনের জন্য তারা দায়িত্ব পালন করবেন।
এ ছাড়া মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে বিশেষ করে বিজিবির প্রতিটি মোবাইল টিমের সঙ্গে একজন করে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন।
নির্বাচন কমিশন ২ এপ্রিল দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। তফসিল অনুযায়ী ৩০ এপ্রিল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্ধারিত সময় শেষে চূড়ান্ত হয় এক হাজার ৮২৪ জন প্রার্থী। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৬০৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬৯৩ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫২৮ জন। ২ মে প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই নির্বাচনের প্রচার শুরু করেন প্রার্থীরা।
তবে এরই মধ্যে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ২২ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে সাতজন চেয়ারম্যান, আট জন ভাইস চেয়ারম্যান ও সাতজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রয়েছেন।
এই ধাপের ভোটে প্রচার-প্রচারণার সময় আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রায় ছয়শ’ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে ইসি। প্রচারণায় নেমে সংঘাত, হুমকি এবং প্রার্থীর পক্ষে জনপ্রতিনিধিদের প্রভাব বিস্তারের অভিযোগও রয়েছে। ইতোমধ্যে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিয়েছে ইসি।
তবে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো উপজেলা নির্বাচন বর্জনের পর ভোটের লড়াই চলছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যেই। ইতোমধ্যে ভোটের প্রচারণায় নেমে ১০টির বেশি উপজেলায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন উপজেলায় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় নামায় চারজন সংসদ সদস্যসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে।
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সম্প্রতি গণমাধ্যমকে জানান, সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্তসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। আচরণবিধি প্রতিপালনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ১৫৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রসঙ্গত, ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬ উপজেলায় ২১ মে, তৃতীয় ধাপে ১১২ উপজেলায় ২৯ মে ও চতুর্থ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ৫ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আর প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে ৮ মে।