সোমালিয়ার জলদস্যুদের কাছ থেকে মুক্ত হওয়া জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ নাবিক চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে ফিরেছেন। মুক্ত হওয়ার এক মাস পর মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনালে পৌঁছেছেন নাবিকেরা। এমভি জাহান মণি-৩ লাইটার জাহাজে করে তারা কুতুবদিয়া থেকে এসেছেন।
জাহাজটি জলদস্যুর কবলে পড়ার পর থেকে দেশে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ছিলেন নাবিকদের স্বজনরা। নাবিকদের কাছে পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন স্বজনেরা। সেই অপেক্ষার অবসান হল। নাবিকদের দেখা পেতে স্বজনেরা বন্দর জেটিতে ভিড় করেন।
এক মাস আগে সোমালিয়ার দস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পেলেও এত দিন নাবিকদের দেখা পাননি স্বজনেরা। এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি আরব আমিরাত ঘুরে চট্টগ্রামে আসার পর প্রথমবার নাবিকদের দেখা পেলেন স্বজনেরা।
নাবিকদের কাছে পেয়ে স্বজনরা খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়েন।
আগে থেকেই জেটিতে অপেক্ষায় ছিলেন কারও মা, ভাই-বোন, কারও স্ত্রী-সন্তান। কেউ কেউ সঙ্গে এনেছেন জাতীয় পতাকা। পতাকা নেড়ে তারা নাবিকদের স্বাগত জানান।
জাহান মণি-৩ লাইটার জাহাজটি বিকেল ৪টার দিকে জেটির কাছাকাছি আসার পর ২৩ নাবিক ডেক থেকে অপেক্ষায় থাকা স্বজনদের উদ্দেশে হাত নাড়েন।
ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদের মা জ্যোৎস্না বেগম আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ‘ঈদের চেয়ে বেশি আনন্দ হচ্ছে। জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর ছেলের জন্য দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ৩৩টা দিন যে কীভাবে কেটেছে তা ব্যাখ্যা করতে পারব না। এখন ছেলেকে কাছে পাব, এর চেয়ে আর বড় সুখ কী হতে পারে!’
জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খানের দুই মেয়েও জেটিতে অপেক্ষা করছিলেন। তারা বলেন, ‘বাবাকে কাছে পাব, এটা ভাবতেই আনন্দ হচ্ছে। আমাদের আজ অনেক অনেক খুশির দিন।’
নাবিকদের ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, কেএসআরএম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সরওয়ার জাহান রোকন, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম।
এমভি আব্দুল্লাহ বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়ায় নোঙর করে সোমবার সন্ধ্যা ৬টায়। জাহাজটির ড্রাফট বেশি হওয়ায় (সাড়ে ১২ মিটার) তা বন্দর জেটিতে ভেড়ানোর সুযোগ নেই। এ কারণে তীর থেকে নৌযানে করে সাগরে নোঙর করে রাখা এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজে উঠে নতুন করে ২৩ জন নাবিক দায়িত্ব নেন। নতুন নাবিকদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন জিম্মিদশা থেকে মুক্ত নাবিকেরা। এরপর মুক্ত নাবিকেরা ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা কেএসআরএম গ্রুপের আরেকটি জাহাজ এমভি জাহান মণিতে করে চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে পৌঁছান।
গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে কেএসআরএম গ্রুপের এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজ ছিনতাই করেছিল সোমালিয়ার দস্যুরা। মুক্তিপণ দিয়ে ৩৩ দিনের মাথায় ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে জাহাজটি মুক্ত করা হয়। এরপর জাহাজটি প্রথমে আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে পৌঁছায়। সেখানে পণ্য খালাস শেষে আরেকটি বন্দর থেকে চুনাপাথর বোঝাই করে চট্টগ্রামের পথে রওনা হয়েছিল জাহাজটি।
১৩ দিনের মাথায় জাহাজটি বাংলাদেশের জলসীমায় এসে পৌঁছাল। আরব আমিরাত থেকে রওনা হওয়ার ১৪ দিন এবং জিম্মি দশা থেকে মুক্ত হওয়ার এক মাসের মাথায় দেশে ফিরলেন নাবিকরা।
মুক্ত নাবিকরা হলেন- এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজের মাস্টার ক্যাপ্টেন আবদুর রশিদ, প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খান, দ্বিতীয় কর্মকর্তা মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, তৃতীয় কর্মকর্তা মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসেন, প্রধান প্রকৌশলী এ এস এম সাইদুজ্জামান, দ্বিতীয় প্রকৌশলী তৌফিকুল ইসলাম, তৃতীয় প্রকৌশলী মো. রুকন উদ্দিন, চতুর্থ প্রকৌশলী তানভীর আহমেদ ও ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান।
অপর নাবিকরা হলেন- ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ, সাজ্জাদ হোসেন, আনওয়ারুল হক, আসিফ উর রহিম, জয় মাহমুদ, নাজমুল হক, আলী হোসেন, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, আইনুল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মোহাম্মদ সালেহ আহমেদ, শফিকুল ইসলাম ও মোহাম্মদ নুর উদ্দিন।