গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমি দখল করে সড়ক-মহাসড়কের পাশে গড়ে তোলা হচ্ছে অবৈধ স্থাপনা। সংশ্লিষ্টদের চোখের সামনে এভাবে দখল হচ্ছে কোটি কোটি টাকা মূল্যের খাস জমি।
অজ্ঞাত কারণে এসব দেখার কেউ নেই! এসব দখলদারি রুখবে কে?- এলাকার সচেতন মহলের মুখে মুখে ঘুরছে এ প্রশ্ন।
দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলোর একটি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক কালিয়াকৈর উপজেলার ওপর দিয়ে গেছে। এ ছাড়াও এ উপজেলার আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সড়ক রয়েছে। এসব মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সড়ক বিভাগের জমি রক্ষায় চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কের পাশে চন্দ্রা এলাকায় একটি রেস্ট হাউজ ও ধামরাই-কালিয়াকৈর-মাওনা সড়কের কালিয়াকৈর বাজার এলাকায় একটি সাইট অফিস তৈরি করা হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, তারপরও দিনের পর দিন সড়ক ও মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধ হাটবাজার বসিয়ে, ফুটপাত দখল করে তাতে দোকানপাট বসিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বিভিন্ন চক্রের সদস্যরা।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ট্রাক স্টেশন এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশের সরকারি জায়গায় থাকা পুকুর ভরাট করছে ব্যক্তিবিশেষ। ছবি: নিউজবাংলা
ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয়রা জানান, চন্দ্রা এলাকায় সড়ক বিভাগের রেস্ট হাউজের পাশেই হাটবাজার ও ফুটপাতে দোকানপাট বসিয়ে রমরমা বাণিজ্য চালানো হচ্ছে। হাইওয়ে পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ ও জেলা পুলিশের চোখের সামনে এসব কর্মকাণ্ড চললেও অজ্ঞাত কারণে তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
সড়ক বিভাগের জমি দখল করে বিভিন্ন স্থানে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে বিভিন্ন সিন্ডিকেট বাণিজ্য চালিয়ে আসছে বলেও আছে অভিযোগ।
এভাবে সড়ক বিভাগের জমি দিন দিন বেদখল হয়ে মোটা হচ্ছে ব্যক্তিবিশেষের পকেট। এসব টাকার ভাগ সড়ক ও জনপথ বিভাগের অসাধু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পকেটেও যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
তদের দাবি, নিয়মিত উৎকোচ পাওয়ায় সংশ্লিষ্টরাও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক দিন আগে থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের লতিফপুর এলাকার জোড়া ব্রিজের পাশে সড়ক বিভাগের জমিতে বিল্লাল হোসেন নামের এক ব্যক্তি দোকান নির্মাণ শুরু করেছেন। এর পাশে ট্রাক স্টেশন এলাকায় মোরশেদ আলম দুরে (সাগর) বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সড়ক বিভাগের সরকারি জমি ভরাট করেছেন।
কালিয়াকৈর বাজার এলাকায় সড়ক বিভাগের সাইট অফিসের পাশেই সরকারি জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। ছবি: নিউজবাংলা
এ বিষয়ে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কালিয়াকৈর থানায় লিখিত অভিযোগ দেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। অভিযোগ পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রজত বিশ্বাসের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ভেকু গাড়ি জব্দ করে ভ্রাম্যমান আদালত, কিন্তু প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে দিন দুয়েক পর আবার রাতের আধাঁরে ওই জমি ভরাট হয়ে গেছে।
এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, অভিযোগ দিয়েই দায় সেরেছে সড়ক বিভাগ। আর সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে কোটি কোটি টাকার সরকারি জমি ভরাটের মাধ্যমে দখল করেছেন সাগর।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সাগর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা আমাদের সম্পত্তি। সড়ক বিভাগের জমি দখল করছি না। এর এক পাশের সম্পত্তি মহাসড়কে গেছে, কিন্তু এখনও রেকর্ড হয়নি। অপর পাশে মহাসড়ক থেকে অ্যাপ্রোস সড়কের জন্য আবেদন করেছি। এখানে অস্থায়ী গরুর হাট করা হবে।’
কালিয়াকৈর বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়ক বিভাগের সাইট অফিসের পাশেই একটি বড় দোকান নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকাশ্য দিবালোকে সে দোকানের ফ্লোর ঢালাইয়ের কাজ চালাচ্ছেন দীপংকর নামের এক ব্যক্তি।
জানতে চাইলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সড়ক বিভাগের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেই এটা নির্মাণ করতেছি।’
এ সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে দোকান মালিক বলেন, ‘আপনারা কেন আসছেন? এ বিষয়ে আপনাদের কী করার আছে?’
ট্রাক স্টেশন এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশের সরকারি জায়গায় থাকা পুকুর ভরাটের আরেকটি চিত্র। ছবি: নিউজবাংলা
প্রকাশ্যে এসব কর্মকাণ্ড চললেও সংশ্লিষ্টদের অতৎপরতার কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তাদের দাবি, অভিযান চালিয়ে দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
এ বিষয়ে গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের কার্য সহকারী তায়েব আলম বলেন, ‘জমি ভরাট করার বিষয়ে মামলা হবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে চিঠি লিখে ইউএনও অফিস ও থানায় পাঠানো হয়েছে।
‘সরকার পক্ষ থেকে ভরাটকারীদের নামে মামলা হবে। বিষয়টি মন্ত্রী মহোদয়ও (আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক) জানেন। এটা নিয়ে তিনবার বসা হয়েছে। আমরা খুব শিগগিরই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী অভি আহম্মেদ সুজন বলেন, ‘ওই জমি ভরাটের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে চলমান দোকানপাট নির্মাণের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এসব সমস্যা সমাধানে এ সপ্তাহেই অভিযান পরিচালনা করা হবে।’
এ ব্যাপারে জানতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রজত বিশ্বাসের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।