আসন্ন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাচন নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের দিয়ে তিনি নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং তার নাম ধরে এক প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, ঠাকুরগাঁও জেলা পরিষদ নির্বাচনে যুবলীগ নেতার কাছে সদস্য পদে পরাজিত হয়ে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারুল ইসলাম সরকার এবার সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। এর আগে তিনি একটি ইউনিয়নের চারবার চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন।
ভোটারদের বক্তব্য, এবার এই প্রার্থীকে নির্বাচনে জেতাতে উঠে পড়ে লেগেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন। মুখে নিরপেক্ষতার কথা বললেও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ নেতাদের ইঙ্গিত ও নির্দেশনা দিয়েছেন যেন মোশারুল ইসলামের পক্ষে নির্বাচন করেন তারা এবং তাকে যেন ভোটাররা ভোট দেন।
সম্প্রতি এই প্রার্থীর প্রচারণার অংশ হিসেবে বিভিন্ন উঠান বৈঠকে ভোটারদের উদ্দেশে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন বক্তব্য দিতে শোনা গেছে। এমন ভিডিও এসেছে এই প্রতিবেদকের কাছে। এক মিটিং এ প্রার্থীর উপস্থিতিরও প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রার্থী নিজেও ভোটের প্রচারণা চালিয়েছেন।
রুহিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-দপ্তর সম্পাদক গণেশ চন্দ্র সেন এক নির্বাচনি সভায় বক্তব্যে বলেন, এমপি রমেশ চন্দ্র সেনের সন্তান (ভাতিজা) রুহিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি পার্থসারথি সেন তার খুব কাছের মানুষ। তার নির্দেশে আপনাদের সংশয় কাটাতে বলতে চাই এমপি সাহেবের একটাই আস্থা, এবারের উপজেলা নির্বাচনে মোশারুলকে চাই।
গত শুক্রবার ১ নং রুহিয়া ইউনিয়নের কালিতলাতে নির্বাচনি বক্তব্যে এসব কথা বলেন রুহিয়া থানা আওয়ামী লীগ নেতা গণেশ চন্দ্র সেন এবং এমন বক্তব্যের কথা শিকার করেছেন তিনি।
শনিবার রুহিয়ার মন্ডলাধাম এলাকায় এক নির্বাচনি আলোচনায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান (এমপির চাচাতো ভাই) অনিল কুমার সেন বক্তব্য দেন। সেখানে এই চেয়ারম্যানকে বলতে শোনা যায়, আমাদের স্থানীয় অভিভাবক আমাদের এলাকার সাংসদ রমেশ চন্দ্র সেন আমাদেরকে মোশারুলের পক্ষে মোটরসাইকেল মার্কায় ভোট করতে বলেছেন।
এখানে অন্য ৩ জন প্রার্থীর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, তারাও আওয়ামী লীগের। কিন্তু আমাদের নেতা যে ইঙ্গিত দেবে, নির্দেশনা দেবে আমরা তার বাইরে যাব না। এ সময় তিনি প্রার্থীর জন্য ভোট চেয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।
চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রতিযোগিতা করা অন্যান্য প্রার্থীরা হলেন, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. অরুনাংশু দত্ত টিটো, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কামরুল হাসান খোকন ও জেলা আওয়ামিলীগ সহসভাপতি রওশনুল হক তুষার।
এসব প্রার্থীদের দাবি, ভোটারদের যেন কোন ভাবে দলের প্রভাব দেখানো না হয়। দলীয় প্রভাব এবং ক্ষমতাসীন কোনো ব্যক্তির প্রভাব যেন দেখানো না হয় সেটাই আহ্বান থাকবে। প্রভাব খাটানোর চেষ্টা হলে এতে ভোটাররা বিভ্রান্ত হবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক অঙ্গসংগঠনের নেতা বলেন, আমরাও আমাদের পছন্দের প্রার্থীকে সমর্থন দেব এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনের চাপে এক প্রকার কোণঠাসা হয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার সমর্থিত প্রার্থীর নির্বাচন করতে হচ্ছে। মূলত এই নির্বাচনকে কারো সার্থের জন্য প্রবাহিত করা হচ্ছে। আমরা বুঝতে পারছি না আমাদের এখন কি করা উচিত।
কোনো একক প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নিতে দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন কি না জানতে চেয়ে ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিরপেক্ষ অবস্থানে আছেন জানান এবং কথা বলতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।