বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সাতগাঁও বনের কোটি টাকার গাছ গায়েব!

  •    
  • ৬ মে, ২০২৪ ২২:২১

অভিযোগ রয়েছে, খোদ বন কর্মকর্তারাই এসব গাছ সাবাড় করার জন্য দায়ী। দিনদুপুরেই তারা নিজেরা দাঁড়িয়ে থেকে লোক দিয়ে গাছ কেটে বন উজাড় করে দিচ্ছেন। বাধা দিতে গেলে উল্টো মামলা করে দেন বন কর্মকর্তারা।

মৌলভীবাজারের সাতগাঁও বনের কোটি টাকার গাছ এককথায় লোপাট হয়ে গেছে। খোদ বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই দিন-দুপুরে এসব গাছ কেটে নিয়ে গেছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে প্রকাশ্যেই গাছ কাটার ঘটনা ঘটছে সংরক্ষিত এই বনাঞ্চলে। কেউ বাধা দিতে গেলে উল্টো বন বিভাগের মামলার হুমকির মুখে পড়তে হয়।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার কোল ঘেঁষেই অবস্থিত সাতগাঁও সংরক্ষিত বনাঞ্চল। প্রায় চল্লিশ হেক্টর উঁচু-নিচু টিলা আর পাহাড়ে ঘেরা এই বনাঞ্চলে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বনজ ও ঔষধি গাছ। এসব গাছ রোপণ করা হয়েছে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায়।

সাতগাঁও বনের গাছগুলোতে এভাবেই নম্বর দেয়া আছে। কিন্তু বন কর্মকর্তাদের দৌরাত্ম্যে গাছই থাকছে না। ছবি: নিউজবাংলা

বনের সব গাছের গায়েই নম্বর দেয়া। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে এই বনের গাছ কেটে সাবাড় করে ফেলেছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। পড়ে আছে কেবল শত শত কাটা গাছের শেকড়সমেত গুড়ি আর ডালপালা। কেটে নেয়া এসব গাছের বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় কোটি টাকা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে সামাজিক বনায়নের জন্য স্থানীয় উপকারভোগীদের নিয়ে এই বাগান গড়ে তোলা হয়। সাতগাঁও বনবিটের আওতায় এই বাগানে দ্রুত বর্ধনশীল আকাশমনি, বেলজিয়াম ও ক্রস গাছ রোপণ করা হয়। কিন্তু এসব গাছ বড় হতে না হতেই শ্যেন দৃষ্টি পড়ে যায় খোদ বন কর্তাদের। দিনদুপুরে হরহামেশাই এসব গাছ কেটে নিয়ে যান বন বিভাগের বিট কর্মকর্তারাই- এমন অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

সাতগাওঁ বনবিট এলাকায় বসবাস করা বাগানের উপকারভোগীদের একজন শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘২০০৭ সালে শ্রীমঙ্গল রেঞ্জ অফিসের মাধ্যমে আমরা এই বাগানের উপকারভোগী হই। এই গাছগুলো রোপণ করার পর এখন বড় হয়েছে।

‘কিছুদিন আগে নিলাম হয়। এরপর সাতগাঁও বিট অফিসার ও শ্রীমঙ্গলের রেঞ্জার অবাধে গাছগুলো কেটে বিক্রি করছেন। এখন গাছগুলোর নিলাম হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী আমরা নিলামের টাকা পাওয়ার সময়। অথচ বন কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে গাছগুলো কেটে গাড়িতে তুলে নিয়ে যান। আমরা বাধা দিলে গাছ চুরির মামলা দিয়ে দেয়া হয়।’

বনের পার্শ্ববর্তী গুচ্ছগ্রামের রুবেল মিয়া বলেন, ‘আমি এখানে গরু চড়াতে আসি। প্রায় সময়ই দেখি বনের কর্মকর্তারা দাঁড়িয়ে থেকে লোকজন দিয়ে গাছ কাটছেন। গাছ কেটে তারা দিনে ও রাতে প্রকাশ্যেই নিয়ে যান। অনেক সময় বড় বড় গাড়ি দিয়েও গাছ নিয়ে যাওয়া হয়। আর এতে বাধা দিলে মামলা দিয়ে দেয়।’

স্থানীয় অধিবাসী মুজাহিদ বলেন, ‘আমার লেবু বাগানে যাওয়া-আসার সময় সাতগাঁও বিটের রাস্তা দিয়ে চলাচল করি। প্রায়ই দেখি বনের লোকেরা গাছ কাটছে। বন কর্মকর্তারা দাঁড়িয়ে থেকে লোকজন দিয়ে গাছগুলো কেটে নিয়ে যাচ্ছে।’

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সাতগাঁও বনবিটের এই সামজিক বনায়নটি ১২ ফেব্রুয়ারি নিলামের টেন্ডার হয়। টেন্ডার প্রক্রিয়া এখনও পূর্ণাঙ্গ হয়নি। এই বাগানে মোট গাছের সংখ্যা ৫ হাজার ৯৪৪টি। এসবের মধ্যে রয়েছে আকাশমনি, বেলজিয়াম ও ক্রস গাছ। ৪০ হেক্টর এলাকাজুড়ে স্থানীয় উপকারভোগী ৪০ জনকে নিয়ে এই বনায়ন গড়ে তোলা হয়।

এ বিষয়ে বন বিভাগের মৌলভীবাজার রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মজনু বলেন, ‘বনের গাছ কাটা হলে তার দায় শুধু বিট অফিসারের নয়। এই দায় উপকারভোগীরাও এড়াতে পারেন না। চুক্তি অনুযায়ী তাদেরও কিছু দায়বদ্ধতা আছে। আর মামলা দেয়ার অভিযোগটি মিথ্যা। বরং তাদের হাতেনাতে ধরেই মামলা দেয়া হয়।’

এ বিভাগের আরো খবর