কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) নতুন ক্যাম্পাসের সামনে লালমাই পাহাড়ের টিলা কেটে তিন তলাবিশিষ্ট রেস্তোরাঁ বানানের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী রানার বিরুদ্ধে।
কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই রেস্তোরাঁ তৈরির জায়গা সমতল করার জন্য প্রায় ১৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট উচ্চতার পাহাড় কাটা হয়েছে। এমনকি পাহাড় কাটার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রও নেয়া হয়নি।
পাহাড় কাটার ওই অংশটি নিজের জমি নয় দাবি করলেও শিক্ষকদের অভিযোগ, তিনি আত্মীয়ের নামে এ জমি কিনে রেখেছেন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ব্যবহার করে এই কাজের তদারকি করছেন প্রক্টর রানা। অভিযোগ রয়েছে, এর আগেও তিনি বিভিন্ন সময় ব্যক্তিগত কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ব্যবহার করেছেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের (সংশোধন) ২০১০-এর ৬-এর ‘খ’ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো পাহাড় বা টিলা কর্তন বা মোচন করা যাইবে না, তবে অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহণক্রমে পাহাড় কর্তন করা যাইবে।’
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, আইনে পাহাড় বা টিলা কাটার জন্য ছাড়পত্রের বিধান থাকলেও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে প্রক্টর কোনো অনুমতি নেননি।
স্থানীয়রা জানান, রাতের আঁধারে চুপিচুপি কাটা হয় পাহাড়। শব্দ হবে তাই ব্যবহার করা হয় না কোনো এক্সকেভেটর। এদিকে মে মাসেও রাতের আঁধারে এই পাহাড় কাটার কাজ চলমান রয়েছে।
ওই স্থানে দায়িত্বরত একজন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত রমজান মাসের রাতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বৈদ্যুতিক লাইট জ্বালিয়ে রাতের আঁধারে শ্রমিকরা পাহাড় কাটছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শ্রমিক জানান, আমাদের পাহাড় কাটতে বলা হয়েছে তাই পাহাড় কাটছি। ভার্সিটির প্রক্টর স্যারের জায়গা এটা। আমরা তো শ্রমিক তাই বিস্তারিত জানি না, তবে প্রক্টর স্যার প্রায়ই এখানে আসেন।’
ওই রেস্তোরাঁরে নাইট গার্ড হিসেবে দায়িত্বরত আছেন কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘রমজানে রাতের বেলা পাহাড় কাটা হয়েছে। কাজ দেখতে প্রক্টর স্যার গাড়ি দিয়ে রাতের বেলা আসেন। কাজের খোঁজ নিয়ে আবার চলে যান।’
সার্বিক কাজ পরিচালনা করছেন শামিম মিয়া নামে একজন ব্যক্তি। তিনি জানান, ‘এখানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের একজন ঠিকাদার কাজ করেছেন। আমি এখন শুধু দেখাশোনা করি। স্যার আমাকে ফোন দিয়ে এটা ওটা করতে বলে আমি সে অনুযায়ী কাজ করি। এখানে পাহাড় কাটা হয়েছে জায়গাটা সমান করার জন্য। এখানে আটটি পিলার বসানো হবে।’
পাহাড় কাটার অনুমতির বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজীব বলেন, ‘পাহাড় কাটার ব্যাপারে আমাদেরকে জানানো হয়নি। আমরা সেখানে লোক পাঠাবো এবং পরবর্তী ব্যবস্থা নেব। যদি প্রমাণ পাওয়া তাহলে ওই ব্যক্তির নামে মামলা করা হবে।’
এ ছাড়াও রেস্তোরাঁর কাজ তদারকির জন্য প্রক্টর বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুমিল্লা-চ ৫১০০৮৪) নম্বরের গাড়ি ব্যবহার করতে দেখা যায়। নিয়মানুযায়ী ওই গাড়ি প্রক্টরিয়াল বডির অফিস সংক্রান্ত কাজে ব্যবহার করার কথা থাকলেও তা তিনি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ আছে।
২২ এপ্রিল সোমবার রাত ৯টার দিকে প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী রানাকে গাড়িসহ ওই স্থানে দেখা যায়। পরে রাত ১০টার দিকে ওই গাড়ির ড্রাইভার আকতারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি বলেন, ‘স্যার সেখানে রেস্তোরাঁ দেখতে গেছেন। আমি এখানে জড়িত না। আমি কোনো সহযোগিতাও করিনি। আমাকে স্যার বলছে তাই গেছি।’
এ বিষয় জানতে কুবির পরিবহন প্রশাসক অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বপন চন্দ্র মজুমদারকে ফোন দেয়া হলে জানান, তিনি ব্যস্ত আছেন। এ বিষয় কথা বলতে পারবেন না।
তবে কুবি পরিবহন পুলের সেকশন অফিসার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ গাড়ি উনার (প্রক্টরের) আন্ডারে থাকে। প্রক্টরিয়াল বডি অফিস সংক্রান্ত কাজে এ গাড়ি ব্যবহার করার কথা। এখন উনি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছে কিনা আমার জানা নাই।’
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর ও বর্তমান শিক্ষক সমিতির কার্যকরী সদস্য মোহাম্মদ আইনুল হক বলেন, ‘প্রক্টরিয়াল বডির কাজে এবং উপাচার্যের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে এ গাড়ি ব্যবহার করতে হবে। অন্য কাজে ব্যবহার করলে সেটা অপরাধ।’
সব অভিযোগ অস্বীকার করে ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘ওইটা আমার জায়গা না। কেউ যদি বলে থাকে এটা আমার জায়গা তাহলে তারা জানে না। আমি সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি নিয়ে যাইনি। তোমার কাছে ভিডিও থাকলে তুমি নিউজ করে দাও। ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করো না।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএফ আবদুল মঈনকে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।