মানিকগঞ্জে বিয়ের প্রলোভনে ভুয়া কাবিনের মাধ্যমে শারীরিক সর্ম্পক ও প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে এক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে।
গত ২৪ এপ্রিল মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সদর আমলি আদালতে এ অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা করেন নির্যাতন ও প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী ওই নারী।
অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য হরিরামপুর থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আকবর আলী খন্দকার। মানিকগঞ্জ সদর থানায় কর্মরত থাকাকালে ওই নারীর সঙ্গে তিনি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন বলে দাবি ওই নারীর।
বাদীর বাড়ি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায়। তিনি স্বামী পরিত্যক্তা ও দুই সন্তানের মা।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, থানায় কাজের সুবাদে বাদীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এএসআই আকবর আলীর। এক পর্যায়ে পারিবারিক সমস্যার কথা বলে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা নেন তিনি। পরে বিয়ের কথা বলে ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর ভুয়া কাবিননামায় স্বাক্ষর নেন এবং স্বামী পরিচয়ে নিয়মিত ওই নারীর বাড়িতে যাতায়াত করতেন তৎকালীন মানিকগঞ্জ সদর থানার এই এএসআই।
এজাহারে উল্লেখ রয়েছে, কাবিনের কয়েকমাস পর ভুক্তভোগী আকবর আলীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এরপর থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন পুলিশের এ কর্মকর্তা। পরে থানায় যোগাযোগ করে আকবরের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাদের বিয়ের কাবিননামা চান ওই নারী। সেসময় কাবিননামা দেয়ার পরিবর্তে তাদের সম্পর্কের কথা, এমনকি ভুক্তভোগীকে স্ত্রী হিসেবেও অস্বীকার করেন আকবর।
পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার বরাবর এবং চলিত বছরের ২৮ জানুয়ারি জেলা লিগ্যাল এইডে লিখিত অভিযোগ করেন ওই নারী। তবে আইনগত সহযোগিতা না পেয়ে স্ত্রীর অধিকার চেয়ে মানিকগঞ্জ অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন ভুক্তভোগী।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আকবর আলী খন্দকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কাজ ব্যস্ত রয়েছেন জানিয়ে তিনি ফোন কেটে দেন। এরপর তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, ‘দুই সন্তান রেখে প্রায় ৩ বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছেন। আমার সব কিছু জেনেও তিনি (আকবর আলী খন্দকার) আমাকে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন পর আমি কাবিননামা চাই, কিন্তু তিনি আমাকে তা না দিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলতে শুরু করেন। এরপর তার বাড়ির ঠিকানা চাইলে তিনি আমাকে স্ত্রী হিসেবে অস্বীকার করেন। তখন ধারণা করি, তিনি আমার সঙ্গে প্রতারণা করছেন। পরে স্ত্রীর অধিকার আদায়ের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেও কোনো সহযোগিতা না পেয়ে বাধ্য হয়ে কোর্টে মামলা করি। আমি স্ত্রীর অধিকার চাই, আমার আর কিছূ লাগবে না।’
তিনি বলেন, ‘পাওনা টাকা আদায়ের জন্য মানিকগঞ্জ থানায় অভিযোগের মাধ্যমে পুলিশ আকবর আলী খন্দকারের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। এরপর কাজের অজুহাতে দিন-রাত ফোন করে কথা বলতেন। প্রথমে একাধিকবার নিষেধ করার পরও তিনি শোনেননি। এরপর আমাদের মধ্যে এক পর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিয়ের কথা বলে তার ও তার বাড়ির প্রয়োজনে আমার কাছ থেকে বিভিন্ন সময় টাকা নিয়েছেন।’
এএসআই আকবর আলী খন্দকার বিবাহিত হলেও ভুক্তভোগীর সঙ্গে কাবিন করার সময় তিনি তা গোপন রেখেছিলেন বলেও জানান ওই নারী।
মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ গোলাম আজাদ খান বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর মামলার বিষয়টি পিবিআই তদন্ত করছে, তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলতে পারব।’