প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে পুড়ছে প্রায় পুরো দেশ। গরমে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। আর ঠিক সেই সময়টাতে সিলেটের পরিস্থিতি ঠিক উল্টো। উজানের ঢল আর বৃষ্টিতে সিলেটে গ্রীষ্মেই বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই জনপদে।
দেশের অন্যান্যা অঞ্চলে বৃষ্টির জন্য হাহাকার চললেও সিলেটে ইতোমধ্যে বৃষ্টির দেখা মিলেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, রোববার থেকে এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বাড়বে। বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে নদ নদীর পানি বেড়ে সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া কর্মকর্তারা।
পাহাড়ি ঢলে সিলেটের ওপর দিয়ে বয়ে চলা নদ-নদীর পানি ইতোমধ্যে বাড়তে শুরু করেছে। সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। আরও কয়েকটি পয়েটে বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করছে।
মার্চ-এপ্রিলের দিকে সিলেটের উজানে ভারতের মেঘালয় ও আসামে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এসব এলাকার বৃষ্টির পানি পাহাড়ি ঢলের আকারে পানি নেমে আসে সিলেটের ওপর দিয়ে। এতে এই এলাকার হাওরসহ নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়।
সিলেট অঞ্চলে অসময়ের এই বন্যা অকাল-বন্যা নামে পরিচিত। বিভিন্ন বছর এই অকাল-বন্যার কারণে সিলেট বিভাগের হাওরাঞ্চলের বোরো ধান তলিয়ে যায়। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তবে স্বস্তির খবর হলো, এবার হাওরাঞ্চলে ধান কাটা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেট কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব বলেন, ‘রোববার থেকে সিলেটে বৃষ্টিপাত বাড়তে পারে। এই সময়ে উজানে ভারতের মেঘালয়েও প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে। ফলে পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে সিলেটে অকাল-বন্যা দেখা দিতে পারে। বৃষ্টি আর ঢলে বিশেষত সিলেটের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয়ের তথ্যমতে, ভারতের মেঘালয় রাজ্যে কয়েক দিন ধরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। এতে ঢল নেমে সিলেটের নদ-নদীগুলোয় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃহস্পতিবারই দুটি পয়েন্টে নদীর পানি শুষ্ক মৌসুমের বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।
সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে শুষ্ক মৌসুমের বিপদসীমা ১০ দশমিক ৮০ মিটার। শনিবার দুপুরে এই পয়েন্টে পানি ১১ দশমিক ০৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
সারি নদের জৈন্তাপুরের সারিঘাট পয়েন্টে শুষ্ক মৌসুমের বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৭০ মিটার। নদের ওই পয়েন্ট দিয়ে শনিবার দুপুরে ১১ দশমিক ৮৯ মিটার উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়। সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্ট এবং কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টেও পানি বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করছে।
এদিকে কয়েক দিনের বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলে জৈন্তাপুর উপজেলার কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে উপজেলার নদ-নদীর পানি। এর মধ্যে ডিবির হাওর ও কেন্দ্রী হাওরে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই হাওরে তলিয়ে গেছে বোরো ফসল।
জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, ‘উপজেলার প্রায় ৯৮ শতাংশ ফসল কাটা শেষ হয়েছে। ফলে পানি বৃদ্ধি পেলেও ফসলের ক্ষতি হওয়ার তেমন কোনো শঙ্কা নেই।
‘উপজেলা প্রশাসন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছে। পাশাপাশি জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’
সিলেট পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ‘ভারতে বৃষ্টির ফলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে বৃষ্টি কমে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তবে ভারতে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আগাম বন্যা দেখা দিতে পারে।’
সিলেটে হাওরের ধান কাটা শেষ পর্যায়ে জানিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেটের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘যেটুকু ধান কাটা এখনও বাকি রয়েছে সেগুলো দ্রুত কাটতে কৃষকদের বলা হয়েছে। আশা করছি আগাম-বন্যা হলেও ফসলের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না।