বরিশালের গৌরনদীতে উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে এক পক্ষের একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে দাবি করেছেন।
এ ছাড়া অপর পক্ষের কর্মী ও ইউপি চেয়ারম্যানসহ দুই জনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয়েছে।
উপজেলার বাটাজোর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন গৌরনদী মডেল থানার ওসি আনোয়ার হোসেন।
আহতরা হলেন গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য সাবেক পৌর মেয়র উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হারিছুর রহমানের কর্মী দেলোয়ার হোসে দিলু, উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরীর কর্মী মাহিলারা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈকত গুহ পিকলু এবং তার মোটর সাইকেলের চালক পলাশ হাওলাদার।
গৌরনদী মডেল থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাটাজোর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। এতে দুই পক্ষের তিনজন আহত হয়েছে। তাদের বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। কোনো পক্ষের অভিযোগ পাইনি। পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
স্থানীয়রা জানায়, গৌরনদী উপজেলা নির্বাচনে বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ পৌর মেয়র হারিছুর রহমানকে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করেন। তার বিরুদ্ধে নির্বাচন করার জন্য বর্তমান চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মনির হোসেন মিয়া ঐক্য করেন। এ নিয়ে উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘বাটাজোর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা আলতাফ হোসেন হিট স্ট্রোকে মারা গিয়েছেন। তার জানাজা নামাজে অংশ নেয়ার উদ্দেশে বাটাজোর বাসস্ট্যান্ডে যায় চেয়ারম্যান প্রার্থী ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মনির হোসেন মিয়া ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পিকলু। সেখানে হারিছ সমর্থকরা আসে। তখন দুইপক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে দুই পক্ষের তিন-চারজন আহত হয়েছে।’
আহত পিকলুর স্ত্রী বিপাশা গুহ বলেন, ‘একজনের জানাজা নামাজে অংশ নিতে বাটাজোর এলাকায় যায় স্বামী সৈকত গুহ পিকলু। সেখানে বাটাজোর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবদুর রব হাওলাদারের ভাই দেলোয়ার হোসেন দিলু ও মাহিলারা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রাসেল রাঢ়ীসহ অর্ধশতাধিক ক্যাডার হামলা করে।’
বিপাশা গুহ বলেন, ‘স্বামীসহ আহতদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে নেয়ার পর হারিছের ক্যাডাররা আমার স্বামীকে হত্যার উদ্দেশে হাসপাতাল ঘেরাও করে। হামলাকারীরা গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। তারা হাসপাতাল কম্পাউন্ডে থাকা অ্যাম্বুলেন্সসহ সকল যানবাহন সরিয়ে দেন।’
পরে উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী ও পুলিশ সদস্যরা হাসপাতালে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
গৌরনদী উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী বলেন, ‘কুপিয়ে জখম হওয়া পিকলুকে শেবাচিম হাসপাতালে নেয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স খবর দেয়া হয়, কিন্তু প্রতিপক্ষের লোকজন হাসপাতাল ঘেরাও করে। তারা অ্যাম্বুলেন্সসহ সকল যানবাহন আটকে দেয়। খবর পেয়ে পিকলুকে উদ্ধার করে শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়।’
বাটাজোর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবদুর রব হাওলাদার বলেন, ‘আমি অসুস্থ। কী ঘটেছে আমি জানি না। শুনেছি নির্বাচনি প্রচারণায় হামলা হয়েছে। এতে দিলু গুলিবিদ্ধ হয়েছে ও পিকলুকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে বলে শুনেছি।’
শেবাচিম হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘তিনজন জখম অবস্থায় এসেছে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।’
তিনজনকে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।