‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ বৃদ্ধাশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তারের পর এ বিষয়ে ব্রিফিং করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে ডিএমপি ডিবির প্রধান হারুন অর রশিদ বুধবার রাতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধ যে অভিযোগটা ছিল, আপনারা বলেছেন, তাকে আমরা আজকে (বুধবার) গ্রেপ্তার করেছি। তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। সব অভিযোগই বিবেচনায় নেয়া হবে।
‘মিল্টনের বাড়ি বরিশালের উজিরপুরে। তার উত্থানটা হচ্ছে তার বাবাকে পিটিয়ে। এলাকাবাসী তারে ধরে এলাকাছাড়া করে। এখানে এসে কিছুদিন শাহবাগে একটা ফার্মেসিতে কিছু কাজ করত। সেখানে ওষুধ চুরি করার কারণে তাকে সেখান থেকে বের করে দেয়া হয়।’
বুধবার রাতে রাজধানীর মিরপুর থেকে মিল্টন বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। ছবি: নিউজবাংলা
ডিবি প্রধান বলেন, ‘মিল্টন একটা পর্যায়ে কিছু লেখাপড়াও করে। সে মিঠু হালদার নামে এক নার্সকে বিয়ে করে। বিয়ে করার পর তার স্বপ্ন- একটা ‘ওল্ড অ্যান্ড চাইল্ড এইজ কেয়ার’ সেন্টার স্থাপন করবে।
‘তখন সে মিরপুর এলাকায় একটা চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার নামের একটা প্রতিষ্ঠান খোলে। সেখানে তারা বাচ্চা আর বৃদ্ধ মানুষগুলোকে নিয়ে আসত; মূলত সেখান থেকে গরিব মানুষগুলোকে নিয়ে আসে।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আপনারাও দেখেছেন- বিভিন্ন মিডিয়াতে, সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়েছে। সে বলেছে যে সেখানে তার অপারেশন থিয়েটার আছে। সেখানে মানুষকে সে বিভিন্ন ধরনের সেবা দেয়। অপারেশন থিয়েটার থাকলে তার তো লাইসেন্স থাকতে হবে। সে লাইসেন্স নেই।’
তিনি বলেন, ‘মিল্টন বিশ্বাস বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাতে লাশ দাফন করেছে। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে আপনি রাতে লাশ দাফন করেন কেন? সে বলে যে, আসলে এ না হলে তো মানুষ আমাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করে।
‘বৃদ্ধাশ্রমে বৃদ্ধদের চিকিৎসা দেয়া হয় না বলে গণমাধ্যমে এসেছে। এ ব্যাপারেও তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনি যে ৩০-৩৫ লাখ টাকা খরচ করেন, টাকা পান কোথায়?
‘ডেথ সার্টিফিকেট তৈরি করে ডাক্তারের সিল-স্বাক্ষর জাল করে সে নিজেই মিডিয়ার কাছে শেয়ার করেছে।’
ডিবি প্রধান বলেন, ‘আমরা এটাও জেনেছি, দেশে ইতোমধ্যে ৯০০ লাশ দাফন করলেও আটশ’ ৩৫টি লাশের কোনো ডকুমেন্টস সে দেখাতে পারেনি।
‘কোনো এক সময় দেখা যায় যে, পাশে একটা মসজিদ ছিল; সেখান থেকে প্রশ্ন উঠেছে, কিডনির পাশে সেখানে রক্তের দাগও রয়েছে।’
হারুন অর রশিদ বলেন, ‘মিল্টন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অজস্র অভিযোগ। অভিযোগগুলোর বিষয়ে আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করব। জানতে চাইব, উনি লাশগুলো কেন রাতে দাফন করতেন।
‘তিনি স্বীকার করেছেন যে, ডেথ সার্টিফিকেটটা উনি নিজে তৈরি করেন। ডাক্তারের সিল-স্বাক্ষর উনি নেন না কেন।
‘অনেকেই তাদের বাচ্চাকে দিয়েছে। একজন বৃদ্ধও গেছেন খোঁজখবর নিতে। তাকে সে সেখানে টর্চার সেলে নিয়ে পিটিয়েছে। এরকম অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তাই সবকিছু মিলিয়ে তার বিরুদ্ধে অজস্র অভিযোগ।’
ডিবি প্রধান বলেন, ‘মিল্টনের দুইটা আশ্রম রয়েছে। একটা হলো সাভারে। আরেকটা এখানে। পাঁচ-সাত শ’ লোক রয়েছে। কিন্তু সেখানে খোঁজ নিয়ে দেখা যাচ্ছে, ২০-৩০ জনের বেশি সেখানে নেই।
‘আমাদের কথা হলো- আমরা তাকে নিয়ে এসেছি এবং কিছু অভিযোগকারী রয়েছেন। তারা মামলা রুজু করবেন। আমরা তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করব যে, কতসংখ্যক মানুষ তার এখানে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিল। কতসংখ্যক মানুষ মারা গেল।
‘সে আসলে এসব তথাকথিত থিয়েটারের নামে সেখান থেকে কিডনি বিক্রি করেছে কি না, আমরা সেটা তদন্ত করব। কেন সে ডেথ সার্টিফিকেটে নিজেই স্বাক্ষর করেছে সেটা আমরা খুঁজে বের করব। তাছাড়া বেশিরভাগ লাশ রাতে কেন দাফন করল, দুটি আশ্রমের কথা বলে শত শত মানুষকে রাখার কথা বলেছে; সবকিছুই আমরা তদন্ত করে দেখব।’