‘বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন সার্কাস চলছে। প্রথমে প্রশাসন সিদ্ধান্ত দিল ২ মে পর্যন্ত সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে, অনলাইনে ক্লাস চলবে। প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শিক্ষক সমিতি আবার এই মগজগলা গরমে সিদ্ধান্ত দিল ২৮ এপ্রিল থেকে সশরীরে ক্লাসে ফিরবে। এর আগে তারা আবার ক্লাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বর্জন করেছিল।’
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ৯৩তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় ও হল বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে উল্লিখিত কথাগুলো বলেন ১৫তম আবর্তনের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী ফাহমিদা সুলতানা।
আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর সংলগ্ন রাস্তায় এ মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। এর সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রাধ্যক্ষ নাসির হোসাইন ও শেখ হাসিনা হলের হাউস টিউটর আল-আমিন হোসেন।
মানববন্ধনে ফাহমিদা আরও বলেন, ‘এখন আবার প্রশাসন আমাদের হল থেকে বের করে দিচ্ছে, অনির্দিষ্টকালের জন্য অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ করে দিচ্ছে। এমনিতে বেশ কিছু বিভাগ করোনার (মহামারি) কারণে পিছিয়ে আছে। তার ওপর তাদের এ ধরনের সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষক সমিতি আর উপাচার্যের দ্বন্দ্বে আমরা বলির পাঁঠা হয়ে আছি। এ পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান আশা করছি।’
কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা হল চালু রাখার পাশাপাশি ক্লাসে ফেরার দাবি জানান।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪তম আবর্তনের ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ছাত্রী সাদিয়া আফরিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলাম পড়াশোনা করার জন্য, তবে বিগত কয়েক মাস যাবত বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি চলছে। কখনও শিক্ষক সমিতি ক্লাস বর্জন করছে তো, এখন আবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনিদির্ষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিচ্ছে, হল বন্ধ করার নির্দেশ দিচ্ছে।
‘একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমার প্রশ্ন, শিক্ষকদের এই দ্বন্দ্বে আমরা শিক্ষার্থীরা কীভাবে দোষী? আমরা কেন ভুক্তভোগী? এখানে অনেক শিক্ষার্থী অর্থাভাবে হলে থাকে। টিউশন করিয়ে নিজের আর পরিবারের ভরণপোষণ সামলায়। তারা কোথায় যাবে?’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যে পড়াশোনায় পিছিয়ে যাচ্ছি, এর দায়ভার কে নেবে? আমি একটাই দাবি করতে চাই, আমাদের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালু করা হোক, হলগুলো বন্ধ না করা হোক।’
কুবির ১৪তম আবর্তনের আইন বিভাগের ছাত্র আনাস আহমেদ বলেন, ‘আজকে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা এখানে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি নিজেদের কিছু ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য। আমাদের ক্লাস, পরীক্ষা চালু করতে হবে, হলগুলো খোলা রাখতে হবে। শিক্ষকদের ওপর বহিরাগতদের হামলার তদন্ত করে সঠিক বিচার করতে হবে দোষীদের।
‘চলমান পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান করতে হবে। অন্যথায় আমরা আমাদের কর্যক্রম চালিয়ে যাব।’
শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে একাত্মতা পোষণ করে কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রাধ্যক্ষ নাসির হোসাইন বলেন, ‘বর্তমানে চলমান সংকট সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। শিক্ষার্থীদের সংকটের মুখেই এ রকম সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আমার মনে হয় না, এমন কিছু ঘটেছে।
‘আর কাজী নজরুল হলে কোনো রকম অবৈধ অস্ত্র বা টাকা ঢোকেনি। আমার হল খোলা থাকবে। আমার হলের শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব আমি নিচ্ছি।’
শেখ হাসিনা হলের আবাসিক শিক্ষক আল-আমিন বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, 'আমার হলে কোনো প্রকার অবৈধ অস্ত্র নেই। আমার হল স্বাভাবিক আছে। আমি শিক্ষার্থীদের বলেছি, তারা তাদের মতো করে হলে থাকতে পারবে। শিক্ষার্থীদের কেউ জোরপূর্বক হল থেকে বের করতে পারবে না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত একটি স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত। বিভিন্ন হল প্রভোস্টদের সাথে কথা বলেছি। তারা বলেছে হল খুব সুন্দরভাবেই চলছে।
‘আর একাডেমিক কার্যক্রম চলুক, সেটাও আমি চাই। আমি মনে করি, এই উপাচার্য একজন অদক্ষ প্রশাসক। তার পদত্যাগই সবকিছুর সমাধান।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের পক্ষেই আছি। যখন কোনো একটা ছুটি হয়, তখন কিন্তু প্রতিবার একই নোটিশ যায় যে, হল ছাড়তে হবে। অনেক সময় হল সিলগালা করে দেয়া হয়। সে ক্ষেত্রে সবাইকে সেটা মানতে হবে।
‘যেহেতু এই নোটিশে সিলগালার কথা বলা নাই, সে ক্ষেত্রে কেউ যদি বিকাল চারটার মধ্যে হল ত্যাগ না করে, তাহলে নিশ্চয়ই হল প্রসাশন শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত নেবে।’