গত দুই সপ্তাহ ধরে দেশজুড়ে তীব্র থেকে অতিতীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে। গরমে হাঁপিয়ে উঠেছে জনজীবন। সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে নানা অসুস্থতা। অতিরিক্ত তাপ সইতে না পেরে মৃত্যুও হচ্ছে অনেকের।
গরমে অসুস্থতাজনিত কারণে বা হিট স্ট্রোকে প্রতিদিনই কমবেশি মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। মঙ্গলবার নাটোর, মুন্সীগঞ্জ ও নীলফামারীতে ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
নাটোরে গরমে তিনজনের মৃত্যু
নাটোরে হিট স্ট্রোকে আব্দুল মান্নান এবং খায়রুল ইসলাম নামে দুজনের মত্যু হয়েছে। এছাড়া হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে রাকিব প্রামাণিক নামে আরও একজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে।
মঙ্গলবার দুপুরে সদর উপজেলার বড় হরিশপুর, লালবাজার ও নলডাঙ্গা উপজেলার উজানপাড়া গ্রামে এ ঘটনাগুলো ঘটে।
সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান জানান, প্রচণ্ড তাপদাহের মধ্যে আব্দুল মান্নান তার নিজ বাড়িতে কাজ করছিলেন। এ সময় মই নিয়ে উপরে উঠতে গেলে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরিবারের সদস্যরা সঙ্গে সঙ্গে তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে, নলডাঙ্গা উপজেলার উজানপাড়া গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী খায়রুল ইসলাম জমি থেকে ভুট্টা তুলতে গিয়ে প্রচণ্ড তাপে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা অসুস্থ অবস্থায় তাকে খাজুরা বাজারে এক পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এছাড়া নাটোর শহরের লালবাজার এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মৃত আব্দুর রহমান প্রামাণিকের ছোট ছেলে রকিব প্রামাণিক হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এ নিয়ে জেলায় একদিনে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জে হিট স্ট্রোকে প্রাণ গেল দুই বৃদ্ধের
মুন্সীগঞ্জ সদরে প্রচণ্ড গরম সইতে না পেরে দুই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে কৃষক ওমর আলী ও তার কিছুক্ষন পর আব্দুল বাতেন মাঝিকে মৃত অবস্থায় মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
৬৫ বছর বয়সী ওমর আলী মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার মোল্লারচর এলাকার বাসিন্দা এবং ৬৮ বছর বয়সী বাতেন মাঝি মানিকপুর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।
বাতেন মাঝির ভাতিজা হাবিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার চাচা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন। আজ তিনি জমি বিক্রির কাজে জেলা রেজিষ্ট্রি অফিসে যান। সেখানে প্রচণ্ড গরমে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা তাকে মাথায় পানি দেই। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক শৈবাল বসাক বলেন, ‘প্রচণ্ড গরম সহ্য করতে না পেরে হিট স্ট্রোকে ওই দুই বৃদ্ধ মারা গেছেন।’
গরমে নীলফামারীতে একদিনে ঝরল চার প্রাণ
প্রচণ্ড গরমের মধ্যে নীলফামারীর বিভিন্ন স্থানে হিট স্ট্রোকে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার ৫২ বছর বয়সী লাল বাবু, বিমলা উপজেলার ৫২ বছর বয়সী মনির হোসেন এবং জলঢাকা উপজেলার ৫৫ বছর বয়সী মনসুর ও ৬৫ বছর বয়সী খোদেজা।
জলঢাকা থানার ওসি আশরাফুল হক জানান, প্রচণ্ড গরমের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে কাজ করার সময় তারা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মারা যান।
মঙ্গলবার এ জেলায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস।