তাপপ্রবাহে পুড়ছে সারা দেশ। এর মধ্যে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে বয়ে যাচ্ছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। চলতি মৌসুমে দিনের পর দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড গড়ছে এই অঞ্চলের একেকটি জেলা।
এরই ধারাবাহিকতায় যশোরে মঙ্গলবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, চলতি বছরে এ পর্যন্ত এটিই দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
একই দিন চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পাবনায়ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন বিস্তারিত।
যশোর: সোমবার দুপুর ২টায় যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার আগের দিন রোববার যশোরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার তা উঠে যায় ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
অতি তীব্র তাপপ্রবাহে নাভিশ্বাস উঠেছে যশোরের সাধারণ মানুষের। বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। তীব্র দাবদাহের মধ্যে ঘরের বাইরে কাজ করতে গিয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
চুয়াডাঙ্গা: মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে চুয়াডাঙ্গায় ২২ বছরের রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অতি তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে জেলার মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। একান্ত প্রয়োজন না হলে কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না।
২০০২ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত রেকর্ড পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০২ সালের ২০ মে চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর ২০০৫ সালের ২ জুন রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
২০১৪ সালের ২১ মে এই জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সোমবার এ জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সবশেষ মঙ্গলবার তাপমাত্রা উঠেছে ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রিতে। ১৯৮৫ সালে চুয়াডাঙ্গায় আবহাওয়া অফিস স্থাপনের পর ৩৯ বছরের মধ্যে এটিই জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
পাবনা: সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পাবনার তাপমাত্রা। আগের দিনের রেকর্ড ভেঙে গড়ছে নতুন রেকর্ড। জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র থেকে অতি তীব্র মাত্রার তাপপ্রবাহ। প্রচণ্ড গরমে পাবনার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
মঙ্গলবার পাবনার ঈশ্বরদীতে সর্বোচ্চ ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা পাবনা জেলায় চলতি মৌসুমের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর বাতাসের আর্দ্রতা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ শতাংশ।
আগের দিন সোমবার ঈশ্বরদীতে ৪২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। আর বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১২ শতাংশ।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন জানান, ঈশ্বরদীতে ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এটিই চলতি মৌসুমে এই জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। তাপমাত্রা আরও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। সে সঙ্গে জেলায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
কয়েক সপ্তাহ ধরে চলমান তাপপ্রবাহে পাবনার জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের খারাপ খুবই অবস্থা। অতি তীব্র তাপপ্রবাহে তারা কাজের উদ্দেশ্যে ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না।
তাপদাহের কারণে আম-লিচুর গুটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে গরমে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে শতশত শিশু রোগীর চাপ।
প্রসঙ্গত, ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
চলমান তাপপ্রবাহ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, বাংলাদেশে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকায় প্রকৃত তাপমাত্রার চেয়ে চার থেকে পাঁচ ডিগ্রি বেশি তাপমাত্রার গরম অনুভূত হচ্ছে। আর সে কারণে গরমে অস্বস্তিও বেশি হচ্ছে।