বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গরমে ডাবের দামে পিপাসা আরও বাড়ছে

  •    
  • ২৯ এপ্রিল, ২০২৪ ২০:৩৬

গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেহেরপুরে ডাবের দাম বেড়েছে অন্যান্য সময়ের তুলনায় অন্তত চার গুন। ফলে দাম শুনেই শুকনো মুখে ফিরতে হচ্ছে বেশিরভাগ ক্রেতাকে।

তিন সপ্তাহ ধরে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে মেহেরপুরের জনজীবন। বৃষ্টি যেন এ জেলার মানুষের সঙ্গে অভিমান করে দুরে চলে গেছে, সেইসঙ্গে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় স্থানীয়দের ভোগান্তির মাত্রা আরও বেড়েছে।

ভ‍্যাপসা গরম ও রেকর্ড তাপমাত্রায় মেহেরপুরে বেড়েছে ডাবের চাহিদা। আর চাহিদার কারণে ডাবের দামও চলে গেছে সাধারণের নাগালের বাইরে। জেলায় ডাবের দাম অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

সাধারণত ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হওয়া ডাব কিনতে এখন ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে ১৮০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকা পর্যন্ত। ফলে অনাবৃষ্টির ও তাপপ্রবাহের মধ‍্যে ডাবের পানিতে প্রাণ জুড়াতে চাওয়া বেশিরভাগ ক্রেতাকে ডাবের দাম শুনেই ফিরে যেতে হচ্ছে।

ডাবের অপ্রতুলতাই ডাবের দামের এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণ বলে জানাচ্ছেন বিক্রেতারা। তারা বলছেন, সারা এলাকায় খোঁজাখুঁজি করেও চাহিদার তুলনায় ডাব পাওয়া যাচ্ছে কম। আর তাও কিনতে হচ্ছে বাড়তি দামে।

জেলার ঐতিহ্যবাহী বামন্দী পশুহাটে গরু বিক্রি করতে আসা জামিরুল বলেন, ‘সকালের দিকে দুইটা বড় গরু নিয়ে এসেছি বিক্রির জন‍্য। কখন বিক্রি হবে জানি না। খোলা আকাশের নিচে গরুর দড়ি ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে গরমে দম বন্ধ হয়ে আসছিল।

‘পশু হাটের সঙ্গেই থাকা দোকান থেকে একটি ডাব নিয়ে দামাদামি না করেই আগে খেয়ে নেই। শেষে দাম শুনে আমি হতবাক! বললাম- কত টাকা দেব? ডাব বিক্রেতা বলল- ২১০ টাকা হয়, আপনি ২০০ টাকা দেন। দাম শুনেও কিছু বলার নেই। ডাব যখন খেয়েছি, দাম তো দিতেই হবে। তাই বলে ২০০ টাকা?’

বামন্দীর আলশেফা ক্লিনিকে রোগী দেখতে আসা আবুল কালাম বলেন, ‘দুদিন হলো আমার নাতনি হয়েছে এই ক্লিনিকে, তাই ডাব নিতে এসেছি। বামন্দী বাজারে ডাবের দোকানে এসে দোকানিকে চারটি ডাব দিতে বলে দাম দিতে গিয়ে পড়েছি বিপাকে। চারটি ডাবের দাম (দোকানি) চাইছে ৭৯০ টাকা। অথচ কিছুদিন আগেও প্রতি পিস ডাব কিনেছি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা করে। আর এখন দাম নাকি ১৯৫ টাকা করে।’

তিনি বলেন, ‘দোকানিকে জিজ্ঞেস করলাম- ডাবের দাম এত বেশি কেন? দোকানি বললেন- একে তো প্রচণ্ড গরম, ডাব গাছে কেউ উঠতে চাইছে না। তাছাড়া ডাব তেমন একটা পাওয়া যাচ্ছে না।’

সিএনজি অটোরিকশাচালক রকিবুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সড়কে ভাড়া মারার পরে যে স্ট‍্যান্ডে গিয়ে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে বিরতিতে থাকি। সেখানে একটা করে ডাব খাই। অথচ আজ বিশ দিন হবে, ডাব খেতে পারছি না; ডাবের পরিবর্তে শরবত খাচ্ছি। জানি শরবতে স্যাকারিন মেশানো আছে, তারপরও উপায় নাই। কারন এক ডাবের দাম কোথায় ২০০ টাকা, আর এক গ্লাস শরবতের দাম ১৫ টাকা।’

বামন্দী পশুহাটের সামনে বসা ডাব বিক্রেতা বলেন, ‘আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাছ থেকে ডাব পেড়ে আনি। চার-পাঁচ বছর আগেও আমরা একটি গাছ থেকে ৪০ থেকে ৬০টি করে ডাব পেড়েছি। অথচ এখন ৬-৭টা গাছ থেকেও তার অর্ধেক পাওয়া যাচ্ছে না। আবার গাছ মালিক খুশি হয়ে ফ্রি খাওয়ার জন‍্য এমনিতেই ৫টা করে ডাব দিয়েছে। আর এখন ডাবের ভেতরে পানি না থাকলে, এমনকি পাড়তে গিয়ে মাটিতে পড়ে ফেটে গেলেও তার দাম দেয়া লাগছে।’

ডাব বিক্রেতা বৃদ্ধ এনামুল শোনালেন অন্য কারণ। তিনি বলেন, ‘মাস দুয়েক আগেও আমরা একশ পিস ডাব আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকা করে কিনেছি। আর তা বতর্মানে কিনছি ১৫ থেকে সাড়ে ১৬ হাজার টাকা করে। ডাবের বেশি দাম হওয়ায় বিক্রিও কমে গেছে। এখন একটা ডাব বেচে ৩০ টাকা লাভ হচ্ছে এটা ঠিক, কিন্তু দিনশেষে খুব বেশি লাভ পকেটে থাকছে না।’

মেহেরপুর জেলা কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সামসুল আলম বলেন, ‘জেলার বতর্মান তাপমাত্রা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে, যা কয়েক বছর ধরেই এই সময়টিতে এমন থাকছে। ফলে উৎপাদন কমার পাশাপাশি জেলায় বিগত কয়েক বছর ব‍্যাপক হারে নারিকেল গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বতর্মান সময়ে গাছে ডাব কম হওয়ার অন‍্যতম একটি কারণ হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবর্তন ও আধুনিক দালান। তাছাড়া নারিকেল গাছের সঠিক পরিচর্যার অভাবের কারণেও গাছে ডাব কম ধরে থাকে। বিশেষ করে গাছের খাদ‍্য ঘাটতি হলে স্বাভাবিক নিয়মেই ফল কম হবে।’

এ কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ, ‘নারিকেল গাছের প্রতি যত্নবান হওয়ার পাশাপাশি এর পরিচর্যায় জোর দিলে ডাবের উৎপাদন বাড়বে।’

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘দুসপ্তাহ ধরে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রোববার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় এ অঞ্চলে, যা ছিল ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর আজ তিনটার দিকে তা গত এক দশকের সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে।’

এ বিভাগের আরো খবর