নওগাঁর নিয়ামতপুরে এক গৃহবধূকে হত্যার দায়ে স্বামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবু শামীম আজাদ সোমবার দুপুরে এ রায় দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সালাউদ্দিন ওরফে টনির (৩৫) বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার মুরাদপুর গ্রামে। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারপক্ষের কৌঁসুলি আবদুল খালেক বলেন, ‘আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হওয়ায় মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে।’
আদালত ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, নিয়ামতপুর উপজেলার ধানসা গ্রামের আবু কালামের মেয়ে ২৪ বছর বয়সী তুকাজ্জেবার সঙ্গে ২০১৯ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের সালাউদ্দিনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে সালাউদ্দিন তুকাজ্জেবার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন।
তুকাজ্জেবা স্বামী সালাউদ্দিনকে নিয়ে ২০২০ সালের ২৯ জুন বাবার বাড়ি নিয়ামতপুরের ধানসা গ্রামে বেড়াতে আসেন। পারিবারিক কলহের জেরে শ্বশুরবাড়িতে থাকা অবস্থায় ১ জুলাই সালাউদ্দিন তার স্ত্রী তুকাজ্জেবার গলায় কাঁচি দিয়ে খুঁচিয়ে গুরুতর জখম করেন।
ওই দিন সকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে তুকাজ্জেবা ও সালাউদ্দিনের ঘর থেকে চিৎকারের শব্দ পেয়ে তুকাজ্জেবার বাবা ও তার মা বাইরে থেকে ঘরের দরজা খোলার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে প্রতিবেশী রবিউল ইসলাম লাথি মেরে দরজা ভেঙে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে তুকাজ্জেবাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পায়।
ওই সময় সালাউদ্দিনের হাতে কাপড় কাটার কাঁচি দেখতে পান তারা। পরে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তুকাজ্জেবাকে নিয়ামতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
স্ত্রীকে আহত করে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন সালাউদ্দিনকে আটক করে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন।
মামলার বিবরণে আরও উল্লেখ করে বলা হয়, এ ঘটনায় নিহত তুকাজ্জেবার বাবা আবু কালাম বাদী হয়ে সালাউদ্দিনের নামে নিয়ামতপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। তদন্ত শেষে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০২২ সালের ২২ জুন আদালতে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের মোট ১৮ জন সাক্ষীর মধ্যে আদালতে ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।
রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের দীর্ঘ সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় দোষী নওগাঁর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবু শামীম আজাদ আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। একই সঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি শুনানি করেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারপক্ষের কৌঁসুলি পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল খালেক। আসামিপক্ষে মামলাটির শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আতিকুর রহমান।
আবদুল খালেক বলেন, ‘সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হওয়ায় বিচারক আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করেছেন। এ রায় হত্যা মামলার ক্ষেত্রে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’