বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গাছহীন সড়কটি যেন ‘উত্তপ্ত কড়াই’

  • সোহেল রানা বাবু, মেহেরপুর   
  • ২১ এপ্রিল, ২০২৪ ১৭:৩২

জেলা বনায়ন ও নার্সারি প্রশিক্ষণ ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস টি হামিম হায়দার বলেন, ‘সড়ক উন্নয়ন সংস্কারের জন‍্য সড়কের দুপাশের গাছ নিয়মকানুন মেনেই কেটে ফেলা হয়েছে। তবে উন্নয়ন কাজ শেষ হলে সড়কে দু-পাশ দিয়ে আবারও বৃক্ষরোপণ শুরু করা হবে।’

কয়েক বছর আগেও কৃষিনির্ভর মেহেরপুরের মূল সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গেলে মনে হতো, এ যেন সবুজঘেরা কোনো এক অরণ‍্য।

চৈত্র কিংবা বৈশাখ মাসের ভরদুপুর বেলাতে অথবা মাঝারি তাপপ্রবাহের মধ‍্যেও কুষ্টিয়া জেলার শেষপ্রান্ত খলিশাকুন্ডি থেকে মেহেরপুর সরকারি কলেজ পর্যন্ত বিস্তৃত এ সড়ক ছিল যথেষ্ট স্বস্তির। তবে এখন সে পরিস্থিতি বদলে গেছে।

সপ্তাহখানেক ধরে খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে এ বিভাগের সবচেয়ে চুয়াডাঙ্গায় এই মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে।

প্রতিদিনই তাপমাত্রা প্রায় এক ডিগ্রি করে বাড়ছে। চুয়াডাঙ্গার পাশের ছোট জেলাটিই হচ্ছে মেহেরপুর। এ জেলার আবহাওয়াও পুরোপুরিই চুয়াডাঙ্গা মতোই।

শনিবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপামাত্রা ছিল। আর বাতাসের আদ্রতা ছিল ১৮%। এর প্রভাব মেহেরপুরেও পড়েছে।

কয়েক বছরের মধ্যেই গাছহীন হয়ে পড়েছে মেহেরপুরে ওই ৩০ কিলোমিটার সড়ক। এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গেলে মনে হয়, এ যেন উত্তপ্ত কড়াইয়ের ওপর দিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে।

অথচ কয়েকবছর আগেও এই ৩০ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশ দিয়ে ছিল কয়েক লাখ সারিবদ্ধ গাছ। যা শুধু দৃষ্টিনন্দনই ছিল না, সড়কে চলাচলকারী মানুষকে অক্সিজেনের পাশাপাশি প্রচণ্ড গরমে দিয়েছে স্বস্তিও।

সড়কে থাকা গাছপালার সারি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রকৃতির তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাবও অনেক সময় বুঝতে দেয়নি সড়কে চলাচলকারীদের।

সম্প্রতি এ সড়কটির উন্নয়ন-সংস্কার করতে গিয়ে সড়কের দু পাশের শতবর্ষী গাছপালাসহ কেটে ফেলা হয়েছে সব ধরনের ছোট বড় গাছ। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে থাকা অসংখ্য পশুপাখিই শুধু নীড় হারা হয়নি, গাছের ছায়াহীন হয়েছে জেলার মানুষও।

গাছ কাটার বছর না ঘুরতেই তার প্রভাব বুঝতে শুরু করেছেন সড়কে চলাচল করা জেলার বাসিন্দারা। তাদের অভিযোগ, সড়ক উন্নয়নের প্রয়োজন আছে এটা ঠিক। তবে বিনা প্রয়োজনে সবগাছ কেটে ফেলা ঠিক হয়নি, এটাও সঠিক। তাই সড়কের দু পাশে খুব দ্রুত সময়েই বৃক্ষরোপণ করা দরকার।

অবশ্য জেলা বন বিভাগ বলছে, সড়ক সংস্কার শেষ হলে আবারও বৃক্ষরোপণের কাজ শুরু হবে।

কৃষক জমির আলী বলেন, আমরা চাষি মানুষ, আবাদ করি ভাত খাই। চৈত্র মাসে রোদের মধ‍্যে কাজ শেষে মাথায় বোঝা নিয়ে রাস্তা পার হয়েছি। আবার রাস্তার পাশে থাকা গাছের ছায়ার নিচে বসে বিশ্রাম নিয়েছি। আর এখন রাস্তার ওপর পা রাখার উপায় নেই। পা পুড়ে যাবে। রাস্তার পাশে থাকা গাছগুলো সব কেটে মরুভূমি বানিয়ে ফেলেছে।

ভ‍্যান চালক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা এখন শুধু বাজারের ভেতরের ভাড়া মারছি। দুই-তিন কিলোমিটার দূরে যাওয়ার অবস্থা আর নেই। রাস্তায় একটা গাছ নাই। রাস্তা দিয়ে যেনোআগুন উঠছে। এতে গাড়ির টাইয়ার গলে যাবে। আর যে ভ‍্যানের থাকবে,তা র অবস্থায় খারাপ হইয়ি যাইছে। অথচ দুই বছর আগেও ১০ মাইল দূরের ভাড়াও মাইরিছি।’

ইজিবাইক চালক মনজুরুল বলেন, ‘রাস্তায় এখন বাহির হওয়া মানে বিপদ। মানুষ বেলা ১২ পরে রাস্তায় পাওয়া যাচ্ছে না। যেখানে আমি সারা দিনে ৭ থেকে ৮০০ টাকার ভাড়া মাইরিছি, সেখানে এ রোদ গরমের কারণে অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে।’

আইনজীবী ফয়সাল বলেন, ‘আমি প্রতিদিন ২০ কিলোমিটার মটরসাইকেল জার্নি করে মেহেরপুর আদালতে যাই। আর বিকেলে ফিরে আসি। সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় মনে হয়,গরম কড়াইয়ের ওপর দিয়ে বাইক চালাচ্ছি। আবার রাস্তায় কোনো গাছের নিচে একটু দাঁড়াব সে কাইদাও নেই। কারণ তিন-চার কিলোমিটারের মধ‍্যে গাছের দেখা মিলবে না।

‘রাস্তার পাশে থাকা ছোট বড় সব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। যেটা আমার দৃষ্টিতে কোনো মতেই ঠিক হয়নি। ইচ্ছে করলে অনেক গাছ রক্ষা করেই। সড়ক উন্নয়ন কাজ করা যেত।’

স্কুলশিক্ষক মকবুল হোসেন বলেন, ‘আমি ২০১৭ সালের দিকে গাংনী উপজেলার জোড়পুকুরিয়া থেকে চৌগাছা সড়ক পযর্ন্ত ৫ হাজারের কাছাকাছি তালের বীজ রোপণ করেছিলাম। অধিকাংশ বীজ থেকে গাছ বের হয়েছিল। গাছগুলো লম্বায় দেড় থেকে দুই ফিট পযর্ন্ত হয়েছিল। অথচ সড়ক উন্নয়নের কাজ করার সময় সব গাছগুলো কেটে ফেলেছে। কোনো কিছু আর অবশিষ্ট রাখেনি। আমি ওই রাস্তায় আর যাইনি। গেলে নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি চলে আসে।’

জেলা বনায়ন ও নার্সারি প্রশিক্ষণ ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস টি হামিম হায়দার বলেন, ‘সড়ক উন্নয়ন সংস্কারের জন‍্য সড়কের দুপাশের গাছ নিয়মকানুন মেনেই কেটে ফেলা হয়েছে। তবে উন্নয়ন কাজ শেষ হলে সড়কে দু-পাশ দিয়ে আবারও বৃক্ষরোপণ শুরু করা হবে।’

এ অঞ্চলের আবহওয়া নির্ণয়কারী চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘কয়েকদিন ধরেই চুয়াডাঙ্গাসহ এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। শনিবার তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে। এদিন এখানে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

‘রোববার ১২টার দিকে ছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আর বাতাসে আদ্রতা ছিলো ২০%। এই অঞ্চলে আপাতত বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই।’

এ বিভাগের আরো খবর